কক্সবাজার কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন : কারা হচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থী?

মোহাম্মদ সোহেল রানা, দৈনিক কক্সবাজার :

১৫ ফেব্রুয়ারী ইসি কমিশনার রাশেদা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞাপ্তিতে জানা যায় কক্সবাজারের ৯ উপজেলা নির্বাচন তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলাগুলোর মধ্যে- আগামী ৪ মে প্রথম ধাপে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা ১১ মে দ্বিতীয় ধাপে রাখা হয়েছে, চকরিয়া, পেকুয়া এবং নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা। অপরদিকে ১৮ মে তৃতীয় ধাপে রামু, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরা পর্যটন নগরীর অন্যতম সদর উপজেলা।

দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলে এই উপজেলা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জাতীয় নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতে চলে এসেছে উপজেলা নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে তাই মানুষের মাতামাতির শেষ নেই। বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে এই একটি শব্দ। কারা হচ্ছেন আগামী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী। যেহেতু এবারের নির্বাচনে সরকারি সিদ্ধান্ত মতে দলীয় প্রতীক থাকছে না।

সেহেতু অনেকে মনে করছেন প্রতীক না থাকায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি জামাত ও জাতীয় পার্টি সহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তার সূত্র ধরে এ-বিষয়ে আমরা কথা বলেছি প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের একাধিক দায়ীত্বশীল নেতার সাথে।

তারই প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কায়াসরুল হক জুয়েল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম মাদু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রেজাউর রহমান রেজা ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুন্না চৌধুরীর নাম উচ্চারিত হচ্ছে।

নির্বাচন করার বিষয়ে সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন আমি এখনো নির্বাচিত চেয়ারম্যান। সবসময় দল ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমার সময়ে উন্নয়ন হয়েছে অনেক। আমার অফিসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চেয়ার বরাদ্দ রেখেছি যা অন্য কোন উপজেলায় করা হয়নি। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও হাইকমান্ড যদি কোন নির্দেশনা দেয়, তাহলে সেটা মেনে নেব।

সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সবসময় মানুষ নিয়ে থাকতে পছন্দ করি।মানুষের সেবা করতে পারলে নিজের মনে তৃপ্তি পাই। নির্বাচন করবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার দলের নেতাকর্মী, আত্মীয় স্বজন ও এলাকার মুরুব্বীদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।

সাবেক পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার বলেন, আমাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ আছে। আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। তাছাড়া দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।

আরেক প্রার্থী মাহমুদুল করিম মাদু বলেন, আমি দীর্ঘ দিন যাবত মানুষের সুখে দুঃখে পাশে ছিলাম। ছাত্র রাজনীতি থেকে এখন আওয়ামী লীগ নেতা হয়েছি। দলের জন্য সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি।আমার মনে হয় সাধারণ জনগণ ও দলের নেতাকর্মীরা আমাকে সমর্থন করবেন।

এদিকে সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী জসিম উদ্দিন বলেন আমি দলের জন্য একজন নিবেদিত কর্মী।বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে কখনো পিছপা হয়নি। কখনো হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বাহিরে যায় নি। চেয়ারম্যান থাকাকালীন সকলে দেখেছে, রাতদিন কি পরিশ্রম করেছি মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে। আমি মনে করি দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি প্রত্যেক শ্রেণি পেশার মানুষ আমাকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায়।

আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ক্রীড়াঙ্গনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রেজাউর রহমান রেজা। তিনি বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে স্মার্ট নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। আমি মনে করি একজন তরুণ হিসেবে আমি সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব। তাছাড়া আমি বিগত কয়েকবছর করোনা মহামারীতে মানুষের পাশে ছিলাম, প্রাকৃতিক বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সহ সকল প্রয়োজনীয় মুহূর্তে মানুষের পাশে থেকেছি, সহযোগিতা করেছি। আশা করছি জনগণ ভোটের মাধ্যমে আমাকে বিজয়ী করবেন।

জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুন্না চৌধুরী বলেন আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বাবা আর ভাইয়ের সাথে থেকে দীর্ঘ সময় থেকে মানুষের জন্য সেবা মুলক কাজ করে চলেছি। মানুষ ও আমাকে চাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন কিনা জানতে চাইলে মুন্না চৌধুরী বলেন এইটা স্থানীয় নির্বাচন। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন সবার জন‍্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আমার পরিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শতভাগ নির্বাচন করব।

এদিকে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার সম্ভাবনা জানতে চাইলে জেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী ও জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা সপ্না বলেন এই সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তবুও হাইকমান্ডের সাথে আলোচনা করে নির্বাচনের ব‍্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট এম. সাইফুল্লাহ নূর নির্বাচন করার সম্ভাবনার কথা জানা যায়।

সেবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এডভোকেট এম. সাইফুল্লাহ নূর জানান, প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতার স্বপ্ন থাকে জনগণের সেবা করা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা। আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। ইতিমধ্যে অসংখ্য নেতাকর্মী আমাকে নিয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমার দল বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে এবং দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো। তবে সবকিছুতে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্র থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত যেকোন সময় আসতেও পারে! সে-লক্ষ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন বলে জানা যায়।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কক্সবাজারের সন্তান মুফিজুর রহমান বলেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে অবশ্যই আমরা অংশ নিব। তবে আমাদের মনে হয় সরকার এখনো সেই রকম পরিবেশ তৈরি করতে পারে নি।

এদিকে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর নুর আহম্মেদ আনোয়ারীর ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেন নি। রাজনৈতিক ভাবে দলটি বেকায়দার মধ্যে থাকলেও, একাধিক সূত্রে জানা যায় তাদের বেশ কয়েকজন নির্বাচনে অংশ নিতে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন।

সদরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে কথা জানা গেছে, যদি বিএনপি, জামাত ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না আসে তাহলে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার অনেকে বলছেন সবকিছু নির্ভর করছে সরকার কেমন নির্বাচন চায় তার উপর। অনেকে আশা করেন সরকার, নির্বাচন কমিশন ও মাঠ প্রশাসন যদি কঠোর হয় তাহলে সহিংসতা সহ অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধ করা সম্ভব। তাছাড়া অনেকে এই নির্বাচনকে ঘিরে যথেষ্ট আগ্রহ, উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে চায়ের দোকান সরগরম করে রাখছেন।

উল্লেখ্য আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে বলেছেন, সারাদেশের সকল উপজেলা নির্বাচনে কোন প্রতিক থাকছে না। সরকার চায় অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি তিনি আহবান জানান।