ছেলের খুনির সঙ্গে ২ লাখ টাকায় চুক্তি করেন বাবা

ডেস্ক রিপোর্ট – র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকার ইদারকান্দী গ্রামের চাঞ্চল্যকর রুবেল হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।
আজ বুধবার বিকেলে কাওরান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান। তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া দুইজন হলেন- আল আমিন (৩৮) এবং শামীম (৩৫)। আল আমিন ও শামীম আপন দুই ভাই।
ঘটনার বর্ণনার দিয়ে এমরানুল হাসান জানান, গত ১১ মার্চ খিলগাঁয়ের ইদারকান্দী বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদের পশ্চিম পাশে মো. রুবেল (২৯) নামের এক যুবকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেই ঘটনায় রুবেলের পিতা বাদী হয়ে একই দিনে খিলগাঁও থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। কিন্তু হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত ছিল।
মামলাটি প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, নিহত রুবেলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ বিষয়ে রুবেল এর পিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। রুবেল এর পিতা জানান যে, তার সন্তানকে প্রকৃত পক্ষে হত্যা করা হয়েছে। রুবেলের লাশ প্রতিবেশী দূর সম্পর্কের আত্মীয় শামীমের নির্মাণাধীন রান্না ঘরের ভেতরে ঘটনার দিন আনুমানিক রাত দেড়টায় পাওয়া যায়।
ঘটনার পরপর শামীম এবং তার পরিবারের লোকজন রুবেলের পিতাকে জানায় যে, রুবেল বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে তাদের রান্না ঘরের ভেতর পড়ে আছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে রুবেল মারা গেছে বলে ভেবে নেন সবাই।
র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক বলেন, ‘কিন্তু পরবর্তীতে রুবেলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এ সময় আল আমিন রুবেলের বাবাকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। রুবেলের পিতা লোভে পড়ে ওই প্রস্তাবে রাজি হয়। সে কারণে রুবেলের বাবা পুলিশের কাছে প্রকৃত তথ্য গোপন করে মামলার ঘটনাস্থল পরিবর্তন করে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আল আমিন রুবেলের বাবাকে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। গ্রেপ্তার আল আমিন ও শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদকালে রুবেল হত্যার এই রহস্য উদঘাটিত হয়।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, রুবেল মাদকসেবী ছিল। নেশার টাকা যোগাড় করার জন্য সে বিভিন্ন সময় চুরি করত। ইতিপূর্বে চুরির ঘটনায় গ্রামে বিচার সালিশ হয়েছে। ঘটনার দিন রাতে রুবেল চুরি করার উদ্দেশ্যে শামীমের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে। শামীম শব্দ পেয়ে ঘরের দরজা খুলে চোর সন্দেহে রুবেলের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় এবং রুবেল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে লোহার রড দিয়ে রুবেলের মাথায় আঘাত করে।
র‌্যাব জানায়, রুবেল মাটিতে পড়ে গেলে শামীম তার বড়ভাই আল আমিনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বিস্তারিত ঘটনা জানায়। তখন শামীম এবং আল আমিন ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য শামীমের নির্মাণাধীন রান্না ঘরের টিনের বেড়ার নিচ দিয়ে রুবেলের লাশ বাড়ির বাইরে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু লাশ অর্ধেক বেড়ার বাইরে যাওয়ার পর আটকে যায়। তখন তারা ঘটনাটিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হিসেবে রটনা করার ফন্দী আটে। এরপর তারা বাড়ির আশেপাশের লোকজন ও রুবেলের চাচা, পিতা, মাতা, এবং ভাইকে ডেকে নিয়ে এসে রুবেল বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে তাদের বাড়িতে পড়ে আছে বলে জানায়। তখন এলাকাবাসীর সহায়তায় শামীম বিদ্যুতের খুঁটি হতে তাদের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগের তারটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাদের কথা বিশ্বাস করে ঘটনাস্থলে আগত সকল লোক রুবেলের হাতে-পায়ে ম্যাসেজ করে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে।
র‍্যাব আরও জানায়, যখন সবাই বুঝতে পারে যে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রুবেলের মৃত্যু হয় নাই। তখন রুবেলের পিতা-মাতা রুবেলের লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়। আল আমিন রুবেলের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হওয়ায় তারা দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য রুবেলের বাবাকে প্রস্তাব দেয়। রুবেলের বাবা লোভে পড়ে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল।
গ্রেপ্তার আসামিরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।