দাঁতে পোকার কারণে বিকেএসপিতে চান্স না পাওয়া সেই ফুটবলার বাংলাদেশ দলে!

তানজীম আহমেদ :

এই তো কিছু দিন আগের কথা। আনিসুর রহমান জিকো শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দলের বাইরে। তরুণ গোলকিপার মিতুল মারমা খেলে চোট পেলেন। এরপরই হঠাৎ তেকাঠির নিচে সুযোগ আসে মেহেদী হাসান শ্রাবণের। জাতীয় দল ছাড়াও ক্লাব দলেও একই সময়ে খেলার সুযোগ পেলেন। তবে শুরুতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে অভিষেকে এক ভুলে গোলও হজম করতে হলো। বসুন্ধরা কিংসের এএফসি কাপের ম্যাচগুলোতে একই অবস্থা। যখন শ্রাবণকে নিয়ে কেউ কেউ কেউ নিরাশ হচ্ছিলেন, তখন জ্বলে উঠতে সময় নেননি ১৮ বছর বয়সী ফুটবলার।

জাতীয় দলে এরপর ম্যাচ না থাকায় খেলার সুযোগ হয়নি। তবে কিংসের হয়ে এএফসি কাপে শেষ ম্যাচে ওডিসা এফসি ও স্বাধীনতা কাপে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে দারুণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছেন। একের পর এক গোলের চেষ্টা নস্যাৎ করে আলোচনায় চলে এসেছেন। আকাশী নীল জার্সিধারীদের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে। এখন একটু একটু করে সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসাও পেতে শুরু করেছেন কুমিল্লা সদর থেকে উঠে আসা ফুটবলার। অথচ একসময় ফুটবল ক্যারিয়ার গড়া নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। স্বপ্নের বিকেএসপিতে শেষ মুহূর্তে ভর্তি হতে পারেননি দাঁতে পোকার আক্রমণের কারণে!

ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় বছর পাঁচেক আগে বাফুফে থেকে ট্রায়ালে টিকে যান। এরপর জাতীয় বয়স ভিত্তিক দলে খেলার সুযোগও আসে। সময়ের পরিক্রমায় চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে এখন প্রিমিয়ারে দেশের অন্যতম সেরা ক্লাবে।

শ্রাবণ সেই দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করে বললেন, ‘স্কুলে পড়ার সময়ে ফুটবলের প্রতি অনুরাগ বাড়ে। শিক্ষকের পরামর্শে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ি, দাঁতে পোকার কারণে। তবে আশা ছাড়িনি। বাফুফের ট্রায়ালে ভাগ্য খুলে যায়। কঠোর পরিশ্রম করে এখন জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। জায়গাটা সুদৃঢ় করার জন্য এখন পরিশ্রম আরও বাড়াতে হবে।’

কিছু দিন আগে জাতীয় দল ও ক্লাবের ম্যাচের পর নেতিবাচক পারফরম্যান্সের কারণে শ্রাবণের রাতের ঘুম উধাও হওয়ার জোগাড়। তবে এখন উল্টো চিত্র। শ্রাবণ বলছিলেন, ‘ম্যাচে খারাপ করলে কটু কথা শুনতেই হবে। এটা আমি মেনে নিয়েছি। আসলে অভিজ্ঞতার কারণে ভুল হচ্ছিল। এছাড়া খারাপ সময়ে সমালোচনা শুনলেও আমার মা ও কোচসহ সতীর্থরা সাহস দিয়ে আসছে। আস্তে আস্তে নিজের ভুল শোধরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। সামনের দিকে আরও গোছালো খেলা উপহার দিতে পারবো।’

৬ ফুট এক ইঞ্চির শ্রাবণ পরিবারে সবার ছোট। বাবা মারা গেছেন দুই বছর বয়সে। মা ও বড় ভাইদের কারণে আজ ফুটবলার হতে পেরেছেন। তবে এভাবে হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি জাতীয় দল কিংবা কিংসের একাদশে জায়গা পাবেন চিন্তাও করেননি। জিকোর সাসপেনশনে ভাগ্য খুলে যায়। সেই জিকো আবার সাসপেনশন থেকে ফিরে এসেছেন। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে। শ্রাবণ বিষয়টি বুঝতে পেরে বলেছেন, ‘জিকো ভাই সবসময় আমাকে সাহায্য করে থাকেন। তার জায়গায় আমি এত দ্রুত খেলার সুযোগ পাবো চিন্তা করিনি। এখন তিনি আবার ফিরেছেন। তবে আমি আমার মতো চেষ্টা করে যাবো। বাকিটা সময় বলবে।’

শ্রাবণের কণ্ঠে একধরনের কাঠিন্যতা। যেখানে দৃঢতার পাশাপাশি কঠিন সংকল্প যেন ঠিকরে বের হচ্ছিল। বড় স্বপ্নের কথা তাই বলতে দ্বিধা করেননি, ‘আমি চাই দেশের শীর্ষ গোলকিপারদের একজন হতে। দেশের পাশাপাশি ক্লাবকে সাফল্য দিতে চাই। এতে করে আমার পরিবার ছাড়াও সবাই খুশি হবে।’

জাতীয় দলে খেলার কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার টানে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তবে পড়াশোনায় এখানেই ইতি না টেনে সামনের বছরে দেওয়ার অপেক্ষা। এরই সঙ্গে নিজেকে তেকাঠির নিচে আরও শাণিত করে সবার মনও জয় করতে চাইছেন। হয়তো কঠিন অধ্যাবসায় শ্রাবণকে পৌঁছে দেবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। সেই দিনগুলোরই এখন অপেক্ষা!