নাইক্ষ্যংছড়ির উৎপাদিত উদ আতর ব্যবহার করেন মধ্যপ্রাচ্যের শেখরাও

মাঈনুদ্দিন খালেদ •

নাইক্ষ্যংছড়িতে উৎপন্ন হচ্ছে বিশ্বসেরা উদ আতর। পার্বত্যাঞ্চল তথা বৃহত্তর চট্টগ্রামে এই প্রথম এখানে এ আতর তৈরী হচ্ছে। উৎপাদিত এ আতর দেশের বাইরে ব্যবহার করেন মধ্যপ্রাচ্যের শেখরাও।

এছাড়া অন্যান্য দেশেও এ আতরের গ্রাহক রয়েছে। বাংলাদেশে তো রয়েছেই। এসব কথা তুলে ধরেন, আতর উৎপাদনে যারা রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের একজন এম জালাল ফারুকি।

তিনি অপকটে বলেন, এ মহৎ কাজটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় তিনি তার ভাই সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘এমকে আগর’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি সে প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর। ভাই সালাহ উদ্দিন ফায়সাল সিইও।
জালাল ফারুকি বলেন, মূলত তাদের উৎপাদিত আতরের নাম ‘উদ আতর’। যা আরব দেশের শেখ, রাজা বা বাদশাহরা ব্যবহার করে থাকেন।

আতর গুলো উৎপাদিত হয় আগর গাছ থেকে অনেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তার পিতা কলিমুল্লাহ দীর্ঘ ২৩ বছর পূর্বে আগরের এ বাগান করেছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের উপবন পর্যটন লেক সংলগ্ন পাহাড়ি টিলায়। ১৫ একর পাহাড়ি ভূমির এ বাগানে আগর গাছ রয়েছে ১৫ হাজার। শুরুতে রোপণ করেছিলেন ৩০ হাজার। বাকী গুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

বাগানের সিইও সালাহ উদ্দিন ফায়সাল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উর্বর পাহাড়ি ভূমি নাইক্ষ্যংছড়ির উৎপাদিত এই ‘উদ আতর’ আরবদের পছন্দের। এ জন্য এ আতরের ব্যবসায়ীরা শেখদের সাথে সুসম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে রপ্তানিতে আগ্রহী । যাদের একজন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভী।

তিনি আরো বলেন, উদ আতরের খবর পেয়ে ছুটে আসেন এ স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে তিনি এ আগর বাগানে এ আতর প্রক্রিজয়াজাতকরণ পদ্ধতি দেখে মুগ্ধ হন।

এসময় তিনি বলেন, তিনি দেশে-বিদেশে অনেক স্থান পরিদর্শন করছেন। কিন্তু নাইক্ষ্যংছড়ি’র মতো অনিন্দ্য সুন্দর পাহাড়ি জনপদ তিনি আর দেখেননি। যেখানে ঝরণা-পাহাড়-নদী-সাগর একাকার।

এছাড়া অন্যান্য ভরপুর বনজ সম্পদের পাশাপাশি উদ আতর উৎপাদন প্রক্রিয়া তাকে বিমুগ্ধ করেছে।

এদিকে এমকে আগার প্রকল্পের প্রোপাইটর মাওলানা জালাল উদ্দিন বলেন, তার পিতা আলহাজ্ব মৌলানা কলিমুল্লাহ নাইক্ষ্যংছড়িতে ধর্মীয় কালচারের গোড়াপত্তন করেছিলেন মাদরাসা, হেফজখানা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। আধুনিকমনা এ ব্যক্তির গড়া এ বাগানটি একটি। তিনি মারা যান ২০২০ সালের মার্চে। এ কারণে বাগানের দায়িত্ব এখন দু’ভাইয়ের উপর। তিনি এ বাগান নিয়ে স্বপ্ন বুনেন। দেখেন উজ্জল ভবিষ্যতও।

তার পিতার এ বাগানের উৎপাদিত উদ আতর দেশে-বিদেশে বিক্রি হয় অতি দামে। এ আতরের বতর্মান মূল্য প্রতি তোলা বা প্রতি ১২ মিলিগ্রাম উদ আতর স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকা। ঢাকায় ২০ হাজার টাকা। মধ্যপ্রাচ্যে ৫০ হাজার টাকা (বাংলাদেশী মূল্যে) ।

তাদের বাগানের উৎপাদিত আতরের ভরা মৌসুম চলছে বর্তমানে। কিন্তু গত দেড় বছরে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় উদ আতর শিল্পে ধস নামে।

তাদেরটারও একই দশা নামে একই সাথে । এ কারণে বর্তমানে ১৪ লক্ষ টাকার আতর সেই লকডাউনের শুরু থেকে স্টক রয়ে গেছে। এখন তাদের এ প্রকল্প পুনরায় শুরুর উদ্দ্যোগ নিয়েছেন তারা। তিনি সরকারের কাছে এ খাতকে শিল্পের আওতায় নিয়ে আসতে আহবান জানানোর পাশাপাশি কারিগরি সহায়তার দাবী জানান।