ফিতনার যুগে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝা বড়ই কঠিন

গত দুদিন ধরে ফেসবুক, ইউটিউব সব অনলাইন মিডিয়ায় একটি বিষয়ে দু পক্ষের পাল্টাপাল্টি মতামত লক্ষ্য করতেছি। বিষয়টি প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের গায়েবানা জানাযা পড়া নিয়ে। উভয় পক্ষ’ই প্রমাণস্বরূপ তাদের ফতোয়া জারি করেছে। যে যার মতো আত্মপক্ষ সমর্থনে ফতোয়া শেয়ার করেছে। আজ এই বিষয়ে কিছু ব্যক্তিগত মতামত-
আমরা হলাম সাধারণ মুসলিম, ধর্মীয় বিষয়ে তেমন গভীর জ্ঞান আমাদের জানা নাই। যা আছে ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কিত যেসব দিয়ে আমরা দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের চর্চা করি। দুনিয়ার এমন কোনো বিষয়ে সেই যে বিষয়ে ইসলামে উল্লেখ নাই। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে জাগতিক সব বিষয়েরই সুস্পষ্ট বর্ণনা দেয়া আছে।

উল্লেখিত বিষয়ে দু পক্ষই নিজেদের স্বপক্ষে ফতোয়া দিচ্ছে, উভয়েরই মতমতে যুক্তি আছে। একটা বিষয় পরিষ্কার যে কোন বিষয়ে দু পক্ষের মতামত কখনো সঠিক হতে পারে না। হয় এক পক্ষ ভুল, অন্যপক্ষ সঠিক। আমরা সাধারণ মুসলিম বর্তমানে নিজেরাই কনফিউশনে আছি। কোনটিকে সত্য হিসেবে গ্রুহণ করবো। কোনটিকে আমরা মেনে নিব। মানুষ দুপক্ষের মতামতেই মোটিভেটেড হয়ে যাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বড় বিতর্ক, যেখান থেকে সৃষ্টি হচ্ছে হানাহানি যেটি মোটেই কাম্য নয়।
একবার সাহাবী হুযাইফা ইবনুল য়ামানকে (রা.) জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো: “কোন ফিতনা বেশি ভয়ানক?”
তিনি বললেন: “যখন তোমাকে ভালো আর খারাপ দুটোই দেখানো হয় আর তুমি জানো না কোনটি করতে হবে।”
[মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা]
বর্তমানেও এটি চলতেছে। সামনে সত্য এবং মিথ্যাকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, আমরা বুঝতে পারছিনা কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা, যেটি শেষ জামানার উম্মতের জন্য অন্যতম একটি বড় ফিতনা। গায়েবী জানাযা নিয়ে ফতোয়ায় আমরা মুসলমান সমাজ আজ দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। এখন প্রয়োজন মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ থাকা। মুসলিম জাতির উপর যখন কোনো ফিতনা আসবে তখন মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, সূরা কাহফে বর্ণিত গুহাবাসীর ঘটনা থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই। অত্যাচারী রাজা যখন মুসলিমদের ইসলাম পালনে বাধা দিচ্ছিল এবং চরম অন্যায়-অত্যাচার করছিলো তখন মুসলিমেরা সকলে মিলে এক হয়ে গুহায় যেয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। তাই, যখন ফিতনা আসবে তখন আমাদের মুসলিম ইমামের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এমন ইমাম যিনি কোরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করে চলেন। আর এরকম ইমাম না পেলে সকল দলমত পরিত্যাগ করে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে।

সত্য হচ্ছে ফিতনা প্রচন্ড আকর্ষণের সৃষ্টি করে। যে কোন ফিতনাই মানুষকে চুম্বকের মতো টানে। যে লোক কোনদিন খবরের কাগজ পড়ে না, ফিতনার সময় সেও সবাইকে জিজ্ঞেস করে – আচ্ছা এর পর কি হয়েছিলো? বর্তমান যুগে ফিতনা চেনার একটা সহজ উপায় হলো ফেইসবুক। যখন যে ফিতনা শুরু হয়, ফেইসবুকের হোম পেইজ আর প্রোফাইল পিকচার ভরে যায় ঐ ফিতনায়।আসলে মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের শিক্ষা যত কম থাকবে তত সহজেই তারা ইসলামের শত্রু এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদানকারী ইসলামিষ্ট–এই দুই গ্রুপের লোকদের দ্বারা সহজেই মোটিভেটেড হয়ে যাবে। ফলে, ইসলামী শিক্ষায় স্বল্পশিক্ষিত মুসলমানেরা তখন হয় ইসলামের শত্রুদের পক্ষ নিবে, অথবা বিভ্রান্তিকর ইসলামিষ্টদের কথায় আবেগ-তাড়িত হয়ে এমন কিছু করে বসবে যার ফলে সমাজে ফিতনা তো কমবেই না, বরং অস্থিতিশীলতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
আসলে মানুষ যত বেশী জ্ঞানবিমুখ হবে, ইসলাম ও দুনিয়া সম্বন্ধে যত কম জানবে, তত সহজেই সুবিধাবাদী গোষ্ঠী তাদের ব্রেইনওয়াশ করে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারবে। কাজেই, ফিতনা থেকে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের মনোযোগী হতে হবে সিরিয়াস ইসলামী জ্ঞান অর্জনের প্রতি, আলেমদের লেকচার শুনতে হবে, সান্নিধ্যে যেতে হবে, প্রচুর বই পড়তে হবে সাধনা করতে হবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। আমাদের দেশে যখনই ইসলাম-বিষয়ক কিছু নিয়ে গন্ডগোল বাধে তখনই দেখা যায় কিছু লোক একটা কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে বিভিন্ন আয়াতের নিজের ইচ্ছামতো ব্যাখা দেয়া শুরু করেছে, এদের ইসলাম-বিষয়ক কথা-বার্তা থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতে হবে। এই জাতীয় লোকরা নিজেরাও বিপথে চলে, আর মানুষকেও বিপথে পরিচালিত করে।

আমি আজকে এই বিষয়ে লিখার একটাই কারণ একজন মুসলিম হিসেবে সত্যটা জানা। বর্তমানে ফেতনার যুগে সত্য মিথ্যার ফারাক বুঝা বড়ই কঠিন। দেশের সম্মানিত ইসলামিক স্কলার-দের কাছে অনুরোধ থাকবে এই ফতোয়া নিয়ে প্রমাণস্বরূপ সঠিক তথ্যটি মুসলিমদের কাছে তুলে ধরুন। মানুষকে সঠিক ইসলামের জ্ঞানের সন্ধান দিন। মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে যেটি থেকে সৃষ্টি হতে পারে বড় বিপর্যয়, আপনাদের ইসলামিক জ্ঞানের মাধ্যমে আমাদেরকে সঠিক তথ্যটি তুলে ধরুন। ধন্যবাদ ।

লেখক: মোঃ মাসুম হোসেন