বন্ধ হল পর্যটকদের ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ

বিশেষ প্রতিবেদক •

অবশেষে বন্ধ করে দেয়া হল পর্যটকদের ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ। সোমবার (১৪ ফেব্রæয়ারি) সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে ছেঁড়া দ্বীপগামি লাইফ বোট, স্পীড বোট ও ট্রলার। একই সঙ্গে সড়কপথে বন্ধ রাখা হয়েছে ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ।

সেন্টমার্টিন স্পীড বোট ও লাইফ বোট মালিক সমিতির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার সকল নৌযান বন্ধ রাখা হয়েছে।
সোমবার সকাল হতে কোন ধরণের লাইফ বোট, স্পীড বোট ও ট্রলার চলাচল করছে না। আগে প্রতিদিনই ৩০টি স্পীড বোট, লাইফ বোট ও ট্রলার পর্যটকদের নিয়ে ছেঁড়াদ্বীপে ভ্রমণে যেত প্রায় ৩ শতাধিক পর্যটক। এখন ছেঁড়া দ্বীপে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখায় কোন পর্যটকই ভ্রমণে যেতে পারছেন না।

মো. খোরশেদ আলম আরও বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক আসে ৪ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত। এসময় পর্যটকদের ছেঁড়া দ্বীপে ভ্রমণে নিয়ে সংসার চালায় কয়েক’শ স্পীড বোট, লাইফ বোট ও ট্রলার চালক ও শ্রমিকরা। কিন্তু এখন ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় এসব মানুষের জীবিকা বন্ধ হয়ে গেল। এখন সরকারের প্রতি আহŸান থাকবে এসব মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করার জন্য। না হয় এসব মানুষ চরম কষ্টে পড়ে যাবে।

২০২০ সালের ১২ অক্টোবর সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ অংশে পর্যটকদের যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সেন্ট মার্টিনে ছয় ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা না মেনে দীর্ঘদিন ধরে ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমনে যান পর্যটকরা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন তদারকিও ছিল স্থানীয় প্রশাসনের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ অংশে এখনও কিছু সামুদ্রিক প্রবাল জীবিত আছে। এসব প্রবাল সংরক্ষণে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুয়ায়ী, সেন্ট মার্টিনের সৈকতে কোনও ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চালানো যাবে না। রাতে সেখানে আলো বা আগুন জ্বালানো যাবে না। রাতের বেলা কোলাহল সৃষ্টি বা উচ্চস্বরে গানবাজনার আয়োজন করা যাবে না।

টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতকারী জাহাজে অনুমোদিত ধারণ সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। অননুমোদিত এবং অনুমোদনের অতিরিক্ত নির্মাণসামগ্রীর সেন্টমার্টিনে যাতায়াত বন্ধ করা হবে। পরিবেশদূষণকারী দ্রব্য যেমন পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করা হবে। কিন্তু এসবের কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এদিকে স¤প্রতি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ১৩টি সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। এ লক্ষ্যে গত মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দ্বীপ রক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তারই সূত্র ধরে, সেন্টমাটিনে সরেজমিনে সুপারিশ বাস্তবায়নে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া ইকোট্যুরিজমসহ দ্বীপকে ঘিরে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলছে বর্তমানে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারেভজ চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা আসে। এই নির্দেশনা প্রেক্ষিতে সেন্টমার্টিন নিয়ে কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন এবং স্থাপনা নির্মাণ বন্ধসহ দ্বীপরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি আমরা। যার কারণে ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াতও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ছেঁড়া দ্বীপগামি সকল নৌ যান এবং সড়কপথে ইজিবাইক। ফলে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত পর্যটকদের ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষেধ।

পারেভজ চৌধুরী আরও বলেন, সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রয়েছে। বিভিন্ন ভৌগলিক কারণে এ দ্বীপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে এ দ্বীপটি অতিঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার চাই, খুব দ্রæত সেন্টমাটিনকে ভালো ম্যানেজমেন্ট করতে।