বাবা না চাচা, কার বুকে শিশু বুলবুলি?

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ বাবার বুকে সন্তানের লাশ! ময়মনসিংহের ফুলপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহতের পর এমনই একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এ ছবিটি নিয়েই শুরু হয়েছে বিভ্রান্তি। কেউ কেউ বলেছেন, বাবা-মেয়ে দু’জনেরই নিহতের ছবি এটি।

আবার কারো কারো ভাষ্য হচ্ছে- বাবা নয়, চাচার বুকেই অন্তিম শয়ানের মর্মান্তিক দৃশ্যের ছবি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে- বাবা শাহজাহান (৪০) বা চাচা শারফুল (৩৬) দু’জনেই প্রাণে বেঁচে আছেন। শুধু হারিয়ে গেছে তাদের প্রাণভোমরা শিশু বুলবুলি। চিরতরে পাড়ি জমিয়েছে না ফেরার দেশে।

সড়ক সন্ত্রাস বন্ধে বছরের পর বছর কোনো কুল কিনারা না হলেও একই পরিবারের ৩ জনসহ ৮ জনের নিহতের ঘটনা কাঁদিয়েছে দেশ মানবতাকে। শোকে পাথর বা গভীর ক্ষত তৈরি করেছে ময়মনসিংহ থেকে শুরু করে সারাদেশের বিবেকবান প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে।

কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটি কী বাবা শাহজাহানের নাকি চাচা শারফুলের, এমন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে তৈরি হয়েছে গোলকধাঁধা। জেলা পুলিশ ছবিটি বাবা শাহজাহানের বলে শনাক্ত করলেও ঘটনাস্থল ঘুরে এসে একাধিক টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মী বলছেন, ছবিটি মূলত চাচা শারফুলের।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘ফুলপুরের মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় এই ছ‌বি‌টির বাবা জীবিত আছে, তার নাম শাহজাহান (৪০) সাং বাকশীবা‌ড়ি, ভালুকা। তবে মেয়ে বুলবু‌লি আক্তার (৭) বেঁচে নেই। অনেকের কনফিউশন ছিল তাই আপডেট দিলাম। আমরা জেলা পুলিশ ময়মনসিংহ অনুরূপ নির্মম দুর্ঘটনা প্রত্যাশা ক‌রিনা।’

পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বাবার বুকে সন্তানের বেদনার্ত ছবিটি সবার হৃদয়ে দাগ কেটেছে। কিন্তু অনেকেই না বুঝে বাবা-সন্তানের মৃত্যুর দৃশ্যের ছবি বলে দাবি করেছে। তবে বাবা শাহাজাহান বেঁচে আছেন এবং ছবিতে বাবা-মেয়েই ছিল।’

যদিও ২৪ ঘণ্টার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ব্যুরো প্রধান হোসাইন শাহীদ ঘটনার পরপরই নিজের ফেসবুকে ঘটনাস্থল থেকে একটি লাইভ করেন। সেই লাইভে তিনি বলেন, ‘বাবা মারা যায়নি। কেউ গুজব ছড়াবেন না। শিশু বুলবুলি মারা গেছেন। আর বাবা নয়, চাচার বুকেই শিশুটি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন।’

বাবা না চাচা, কার বুকে শিশু বুলবুলি
আরেকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ব্যুরো প্রধান সুলতান মাহমুদ কনিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে শিশু বুলবুলি আক্তারকে চাচা বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। আমরা বাবা ও চাচার আলাদাভাবে বক্তব্য গ্রহণ করেছি। সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতেও আমরা নিশ্চিত হয়েছি ভাতিজি বুলবুলি আক্তারকে বুকে জড়িয়ে চাচাই মাটিতে শুয়ে ছিলেন।’ একই রকম মন্তব্য করেছেন আরেকটি টিভি চ্যানেলের ব্যুরো প্রধান সৈয়দ নোমান।

এদিকে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমারত হোসেন গাজী নিজেও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন। তিনিও বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটি বাবা শাহজাহান ও মেয়ে বুলবুলি আক্তারের। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’

ছবিটি বাবা বা চাচা যার সঙ্গেই হোক না কেন, এই বেদনাবিধুর ও মর্মান্তিক ছবিটিই ময়মনসিংহের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়-মস্তিষ্ককে নাড়িয়ে দিয়েছে। চোখে হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আর কত প্রাণ গেলে বন্ধ হবে এ সড়ক সন্ত্রাস?

প্রসঙ্গত, সকালে আত্মীয়ের জানাযা’য় অংশ নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে ১৪ জন শেরপুরের নালিতাবড়ি উপজেলায় যাচ্ছিলেন। পথে ফুলপুরের বাশাটি এলাকায় আসলে মাইক্রোবাসটি একটি ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পাশের একটি পুকুরে পড়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। এ সময় এক শিশু ও পাঁচ নারীসহ আটজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহতরা হলেন- জেলার গফরগাঁও উপজেলার বাতুরী মশাখালী এলাকার শামসুল হক (৬৫), তারাকান্দা উপজেলার দাদরা এলাকার নবী হোসেন (৩০), গফরগাঁওয়ের শেখ বাজার এলাকার রিপা খাতুন (৩০), একই এলাকার রেজিয়া খাতুন (৫৩), পাগলার মশাখালি এলাকার পারুল আক্তার (৫০), ভালুকার বাকশীবাড়ি বিরুনিয়া এলাকার মিলুয়ারা বেগম (৫৫), ছেলের স্ত্রী বেগম (৩০) ও তার মেয়ে বুলবুলি আক্তার (৭)।