পেকুয়ায় বাসর রাতে ডাকাতের গুলিতে বর নিহতঃ ১৩ ঘন্টার ব্যবধানে জনতার পিটুনিতে দুই ডাকাত নিহত

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ◑

কক্সবাজারের পেকুয়ায় বাড়ি ডাকাতিকালে সশস্র ডাকাত দলের গুলিতে মো. নুরুন্নবী (২৫) নামে এক নববিবাহিত প্রবাসী নিহত হওয়ার ১৩ ঘন্টার ব্যবধানে বিক্ষুদ্ধ জনতার গণপিটুনিতে জামাল হোসেন (৩৫) ও মো. কাইছার (২৫) নামের দুই ডাকাত নিহত হয়েছেন।

বাড়ি ডাকাতিকালে সশস্র ডাকাত দলের সদস্যরা নিহত নুরুন্নবীর ছোট ভাই মোজাম্মেল হক এবং তাদের মা হাজেরা বেগমকে (৮০) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও মারধর করে আহত করে।

এদিকে ডাকাতের গুলিতে প্রবাসী নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ জনতা ডাকাতি স্থলের পার্শ্ববর্তী জঙ্গলের ভেতর থেকে তিন ডাকাতকে ধরে এনে গণপিটুনি দিলে দুই ডাকাত নিহত ও অপর একজন ডাকাত দলের সদস্য আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ডাকাত দলের সদস্যকে উদ্ধার করে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে এবং বুধবার (১২ ফের্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের সাপেরগাড়া এলাকায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ডাকাতের গুলিতে নিহত প্রবাসী মো. নুরুন্নবী উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের সাপেরগারা এলাকার হাসান শরীফের ছেলে। তিনি এক মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরার পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিয়ের পিড়িতে বসেন। এছাড়া বিক্ষুদ্ধ জনতার গনপিটুনীতে নিহত ডাকাত জামাল হোসেন একই ইউনিয়নের উত্তরের জুম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. আলমগীরের ছেলে এবং মো. কাইছার একই এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে। আহত অপর ডাকাত দলের সদস্য নাসির হোসেন (২৮) বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।

স্থাণীয় এলাকাবাসী সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ৮-১০ জনের সশস্র মুখোশ পরিহিত ডাকাতদল প্রবাসী নুরুন্নবীর বাড়িতে হানা দেয়। রাতের আঁধারে বাড়ির উঠানে প্রথমেই ডাকাত দলের সদস্যরা নুরুন্নবীর বড় ভাই ফরিদুল আলমকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে ফেলার পর এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে রান্নাঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকেন সশস্র ডাকাত দলের সদস্যরা। এ সময় নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ডাকাত দলের সদস্যরা প্রথমে নুরুন্নবীকে পেটে ছুরিকাঘাত ও পরে গুলিকরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ডাকাতিকালে বঁাধা দিতে গেলে সশস্র ডাকাত দলের সদস্যরা নিহত নুরুন্নবীর ছোট ভাই মোজাম্মেল হক এবং তাদের মা হাজেরা বেগমকে (৮০) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও মারধর করে আহত করে।

এলাকাবাসী আরো বলেন, এ ঘটনায় গ্রামের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বুধবার (১২ ফের্রুয়ারি) ভোরেই কয়েকশত লোক ডাকাতিস্থলের পার্শ্ববর্তী সাপেরগাড়া পাহাড়ে ঢুকে পড়ে। পরে সন্দেহভাজন তিনজন ডাকাত দলের সদস্যকে ধরে গণপিটুনি দেয় উত্তেজিত জনতা। এসময় ঘটনাস্থলে একজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো একজন ডাকাত নিহত হয়।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল আজম বলেন, মঙ্গলবার রাতে ডাকাতের গুলিতে প্রবাসী নুরুন্নবী নিহত হওয়ার পর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী শেষে তার লাশ ওই রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। বুধবার বিকালে নিহত নুরুন্নবীর ময়নাতদন্ত তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, বুধবার (১২ ফের্রয়ারি) সকালে জনতার পিটুনিতে নিহত দুই ডাকাত দলের সদস্যের লাশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী শেষে এদিন দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় থানায় পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।