জ্বালানি ব্যবস্থাপনার নতুন যুগে বাংলাদেশ

  • মহেশখালীতে দেশের প্রথম সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং সৌদি থেকে আসা অপরিশোধিত তেল খালাসের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হচ্ছে কাল

মহেশখালী প্রতিনিধি •

সাগর থেকে জ্বালানি তেল খালাসে মহেশখালী উপকূলে বহুল প্রতীক্ষিত ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ নির্মাণ শেষে এখন চালুর অপেক্ষায় আছে। আগামীকাল রোববার সৌদি আরব থেকে আসা অপরিশোধিত তেল মুরিং পয়েন্টে দেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ও ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) কর্মকর্তারা।

সিঙ্গেল পয়েন্ট মোরিংয়ের মাধ্যমে তেল সরবরাহ করে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, ২৪ জুন রাতে সৌদি আরব থেকে ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েলবাহী (অপরিশোধিত তেল) একটি জাহাজ মহেশখালীতে মুরিং পয়েন্টে আসবে। ২৫ জুন আমরা পরীক্ষামূলক কমিশনিং শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। এরপর পরিশোধিত তেলের জাহাজ আসলে দ্বিতীয় পাইপলাইনটিও কমিশনিং করার প্রস্তুতি আছে। তিনি আরো বলেন, জুলাই অথবা আগস্ট মাসের কোনো একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে সমুদ্রপথে ৬০ লাখ টনেরও বেশি জ্বালানি আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাংকারগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। এর ফলে এসব ট্যাংকার গভীর সমুদ্রে নোঙর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল খালাস করা হয়। তাতে এক লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাংকার খালাস করতে লেগে যায় ১১ দিন।

এ পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় এইচএসডি স্থানান্তরের জন্য ২০১৫ সালে পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) হাতে নেওয়া হয়। মোট ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতোমধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্যান্য কারণে খরচ আরেকটু বাড়বে বলে মনে করছে ইআরএল কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান বলেন, চীনের এঙ্মি ব্যাংকের সঙ্গে ঋণের বিষয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এরপর কাজ শুরু হলে কোভিডের কারণে কাজ আবার পিছিয়ে গেছে।

জানা যায়, মহেশখালীতে দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার স্টোরেজ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ ধরনের প্রকল্প আগে ছিল না। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ৯০ লাখ টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল পরিবহন করা যাবে। এর মাধ্যমে সময় সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি বছরে অন্তত ৮০০ কোটি টাকার খরচ সাশ্রয় হবে।

মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মহেশখালীতে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ। আগামী রোববারে এসপিএম প্রকল্পে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল আনলোডের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করছে এ প্রকল্প। এরই মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বর্তমানে আমদানি করা জ্বালানি তেল বড় জাহাজ থেকে লাইটারে, সেখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পৌঁছায় রিফাইনারি ট্যাংকে। এতে ১ লাখ টনের তেলবাহী জাহাজ খালাস করতে সময় লাগে ১১ দিন। এসপিএম চালু হলে সময় লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট কমবে, পরিবহন ব্যয়ে বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। সেইসাথে বাড়বে বাংলাদেশের তেল মজুদ ক্ষমতা।