‘মিনি কক্সবাজার’ কেড়ে নিল একই পরিবারের সাতজনসহ ১৭ জনের প্রাণ: সবাই ছিলেন একই মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক

অনলাইন ডেস্ক ◑ নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার মিনি কক্সবাজার হিসেবে খ্যাত উচিতপুরের হাওরে ঘুরতে এসে বুধবার দুপুরে রাজালীকান্দা হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে কমপক্ষে ১৭ জনের সলিল সমাধি হয়েছে। এ ঘটনায় একজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। নিহতদের সবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলা সদরের চরাঞ্চল কোনাপাড়া ও চর খরিচা গ্রামে। এরা সবাই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ৮ জন একই পরিবারের সদস্য।

নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার তেলিখালি মাদ্রাসা পরিচালক মাওলানা শফিকুর রহমানের আমন্ত্রণে আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে ময়মনসিংহ সদরের কোনাপাড়া গ্রামের মারকাজুল সুন্নাহ মাদ্রাসার মুহতামিম ও শিক্ষকরা এই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। বাকিরা সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।

নৌকাডুবির ঘটনায় নিহতদের আটজন কোনাপাড়া গ্রামের মারকাজুল সুন্নাহ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুর রহমানের পরিবার সদস্য। তিনিসহ সবার সলিল সমাধি হয়েছে। নিহতদের বাকি দুজন তাদের প্রতিবেশী এবং অন্যদের বাড়ি কোনাপাড়া ও চর খরিচা গ্রামে।

নিহতরা হলেন মাহফুজুর রহমান (৪৫), তার দুই পুত্র আসিফ (১৫) ও মাহবুব (১২), ভাগ্নে রেজাউল (১৫), ভাতিজা জোবায়ের (২০) ও জোনায়েদ (১৭), ভাতিজি লুবনা (১৩) ও জুলফা (৭)। এছাড়াও তাৎক্ষণিক পাওয়া অন্য নামগুলো হচ্ছে শফিকুর রহমান (৪০), ইসা মিয়া (৪০), আজহারুল ইসলাম (৩৮), সামাআন (২০), মুজাহিদ মিয়া (১৭), হামিদুল ৩৫), সাইফুল ইসলাম রতন (৩০) জহিরুল ইসলাম (৩৫), রাকিব (২০)। এ দুর্ঘটনায় সাধ (২৬) নামে একজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার করা মৃতদেহ
নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার করা মৃতদেহ

স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার তেলিখালি মাদ্রাসা পরিচালক মাওলানা শফিকুর রহমানের আমন্ত্রণে আনন্দ ভ্রমণে অংশ নেন ময়মনসিংহ সদরের কোনাপাড়া গ্রামের মারকাজুল সুন্নাহ মাদ্রাসার ৪৮ জন ছাত্র-শিক্ষক। নেতৃত্বে ছিলেন মারকাজুল সুন্নাহ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হাফিজুর রহমান। বুধবার সকালে তারা নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার মিনি কক্সবাজার হিসেবে পরিচিত উচিতপুর হাওর এলাকায় আনন্দ ভ্রমণে আসেন। তারা একটি ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকায় করে উচিতপুর ঘাট থেকে গোবিন্দশ্রীর দিকে যাচ্ছিলেন। হাওরে পানি খুব বেশি না থাকলেও প্রবল বাতাসের কারণে বড় বড় ঢেউ উঠায় নৌকাটি রাজালীকান্দা নামক স্থানে হঠাৎ কাঁত হয়ে ডুবে যায়। এ দৃশ্য দেখে আশপাশের নৌকা নিয়ে মাছ ধরার লোকজন দ্রুত এগিয়ে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। নৌকাটির বেশিরভাগ যাত্রী সাঁতরিয়ে আশপাশের নৌকায় উঠতে সক্ষম হলেও ১৭ জন হাওরের পানিতে তলিয়ে যায়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনী ও পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দুই কন্যা শিশুসহ ১৭ জন মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলের আশে পাশে স্বজনদের আহজারিতে আকাশ বাতাস ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছে।

এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ তালুকদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, রাজালীকান্দা হাওরে নৌকাডুবির ঘটনায় বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুই শিশু কন্যাসহ ১৭ জন মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া ৩০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছ।

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি জানান স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। রাতেই তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, লাশ বাড়িতে নেওয়া ও দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।