রোহিঙ্গাদের সামনে এখন শুধুই অন্ধকার

ডেস্ক রিপোর্ট •

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের একদিন পর সেদেশে বসবাসরত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিকের শঙ্কা, রোহিঙ্গা অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। কেননা এরই মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বন্দিশিবিরে জীবন কাটাচ্ছে। সেখানকার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র যখন রোহিঙ্গাদের নিয়ে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, তখন মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসতে চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র রুদ্ধদ্বার বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেবে।

তবে বাংলাদেশ দেশসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান। কেননা ৩ বছর আগে যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরকে ফেরাতে এখন পর্যন্ত শক্ত কোনো পদক্ষেপ সংস্থাটি নেয়নি। এমনকি নির্লিপ্ত থেকেছে বিশ্বের অন্য প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোও।

আর এসব কারণেই ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বইতে হচ্ছে। আরও যে কতদিন সেই বোঝা বইতে হবে, কেউ তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। বিশেষ করে সেনা অভ্যুত্থানের পর সেই প্রক্রিয়া আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের মধ্যস্থতায় যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা সেনাশাসিত সরকারও এগিয়ে নেবে। সে জন্য তিনি মিয়ানমারের আগের সেনাশাসকদের উদাহরণ টেনেছেন।

আমরাও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় আশা রাখতে চাই। অবশ্য এছাড়া আমাদের করারই বা কি আছে? গত ৩ বছরে আমরা দেখেছি চীনের মতো শক্তিশালী দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একাধিকবার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের বিরুদ্ধে সরাসির অবস্থান নিয়েছে। এমনকি এখনো নিচ্ছে, ভবিষ্যতেও হয়তো নেবে।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রপতি, স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লাইং। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, সহজে তারা ক্ষমতা ছাড়বে না। যতই ১ বছরের কথা বলুক না কেন। এর আগেও তারা এমন করে ৬ দশক ক্ষমতায় থেকেছে।

সার্বিক বিবেচনায়, সত্যিকার অর্থেই এখন সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীই। বিশেষ করে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের দেশে ফেরার উদ্যোগ এখন থমকে যাবে। কেননা যে সেনাবাহিনী তাদেরকে গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মুখে ফেলেছে, সেই সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা দখলের পর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে; তা অনেকেই মনে করেন না।

আমরা মনে করি, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে রোহিঙ্গাদের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। আর সেই অন্ধকার থেকে কবে মুক্তি মিলবে তাদের? সেটাই এখন দেখার বিষয়। /চ্যানেল আই