কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ এসআই মহসিন চৌধুরী-পিপিএম

আবদুল্লাহ আল আজিজ, কক্সবাজার জার্নাল :

জেলা পুলিশের কার্যালয় হতে সম্মাননা পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন এসআই মহসিন চৌধুরী।

কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ এসআই নির্বাচিত হলেন চকরিয়া হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির (এসআই) মহসিন চৌধুরী-পিপিএম। মামলার তথ্য উদ্ঘাটনে অনবদ্য অবদান রাখায় তাকে এই পদে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশে সততা, মেধা ও সাহসীকতার এক অনন্য উদাহরণ তিনি।

তিনি যোগদান করার পর থেকেই পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে সুনাম অর্জন অব্যাহত রেখেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় অস্ত্র উদ্ধারকারী ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন, ডাকাত ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারে সাহসীকতার জন্য বিশেষ অবদান রাখায় কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রেকর্ড কক্সবাজার জেলায় ৮ম বারের মত শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন।

জেলা পুলিশের কার্যালয় হতে সম্মাননা পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন এসআই মহসিন চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকালে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মাসিক সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন,মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, চোরাচালান বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলসহ পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়াই পৌঁছে দেওয়া এবং যাবতীয় কাজে চৌকস দক্ষতা এবং ফেব্রুয়ারী মাসে ৪টি সাজা পরোয়ানা সহ ৩০টি ওয়ারেন্ট তামিল/নিষ্পত্তি, মামলা নিষ্পত্তি,চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধ এবং ৯৯৯ সংবাদে দ্রুত রেসপন্স করে ব্যবস্থা গ্রহণ সহ আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখার কারণে কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার হিসেবে এসআই মহসিন চৌধুরীর হাতে স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা স্মারক, সনদপত্র ও নগদ অর্থ পুরষ্কৃত করা হয়।

জেলা পুলিশের কার্যালয় হতে সম্মাননা পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন এসআই মহসিন চৌধুরী।

এর আগে তিনি জুন, জুলাই, আগষ্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে জেলার শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডিসেম্বর এক মাস বাদ গেলেও তিনি আবারো স্বরূপে ফিরে এসেছেন এবং ২০২৩ সালের গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদান রাখার জন্য তাকে বাংলাদেশ পুলিশের সম্মানজনক এই (পিপিএম- সাহসিকতা) পদকে ভূষিত হয়েছেন।

জেলা পুলিশের কার্যালয় হতে সম্মাননা পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন এসআই মহসিন চৌধুরী।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৪’ এর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহসিন চৌধুরীকে এ পদক পরিয়ে দেন।

তার এই অনন্য সাফল্য স্বরূপ পুরস্কার পিপিএম পদকে ভূষিত হওয়ায় তার সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং তার নিজ জন্মনিবাস চন্দনাইশের সর্বস্তরের জনগণ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে অতীতের মতো আগামী দিনেও দেশ ও জাতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন এই দোয়াও করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

জেলা পুলিশের কার্যালয় হতে সম্মাননা পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন এসআই মহসিন চৌধুরী।

জানা যায়, এসআই মহসিন চৌধুরী হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদানের পর থেকেই বিট পুলিশিং কার্যক্রম, পরোয়ানাভুক্ত আসামী গ্রেফতার, এলাকার মাদক, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, অবৈধ জমি দখল, পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়াই পৌঁছে দেওয়া সহ বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন এবং একটানা ছয়বার জেলার শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী অফিসার হিসেবে পুরষ্কৃত হয়েছিলেন এই সাহসী অফিসার। এর আগে তিনি উখিয়া থানায় থাকাকালীন জুন মাসে জেলার শ্রেষ্ঠ হয়েছিলেন।

এ বিষয়ে মহসিন চৌধুরীর কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, আমি এ সম্মাননা ও পুরষ্কার পেয়ে খুবই আনন্দিত। এ পুরস্কার আমার মা-বাবার কাছে উৎসর্গ করছি।

শ্রেষ্ঠত্বের পুরষ্কার

তিনি বলেন, আমার এ সফলতা অর্জনের পেছনে জেলা পুলিশ সুপার, চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিবিড় তদারকিসহ হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রম, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দায়িত্বের প্রতি তাদের আনুগত্য জড়িয়ে আছে।

আমাকে পুরষ্কৃত করার জন্য কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), অতিঃ পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্), অতিঃ পুলিশ সুপার (ডিএসবি), সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল), চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসিসহ সকলের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পাশাপাশি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আল ফারুক, এএসআই রাজীব ধর, এএসআই সোলায়মান খাঁন, এটিএসআই আঃ আজিজ, এএসআই বিকাশ সিংহ, এএসআই পারভেজ এবং চকরিয়া থানা ও হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির অন্যান্য সকল অফিসার ফোর্সের প্রতি।

তিনি আরও বলেন, এ গৌরব শুধু তার একার নয়, এটি থানার প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদের। অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে এই গৌরব অর্জন হয়েছে।এ পুরস্কারটি আমার দায়বদ্ধতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ভালো কাজ করতে আরও উৎসাহী করবে। আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পালন করতে এবং আমি কখনও অন্যায়ের সাথে আপোষ করি না। অন্যায়কারীকে আমি কখনো ছাড় দেই না।

তাই সকলের ভালোবাসা নিয়ে নব উদ্যমে আরও ভালো কাজ করে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে দোয়া এবং আগামীতেও এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই (নিরস্ত্র) মহসিন চৌধুরী একজন দক্ষ ও অত্যন্ত পরিশ্রমী অফিসার। আগামীতে সে আরও ভালো করবে। আমি তার সফলতা কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসে ৩৮টি তামিল/নিষ্পত্তি সহ সামগ্রিক মূল্যায়নে জেলার শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী অফিসার নির্বাচিত হন।

উল্লেখ্য, এসআই মহসিন চৌধুরী ২০০৩ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। এরপর থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছেন। নিজের মেধা ও বিচক্ষণতা দিয়ে সমাধান করেছেন একাধিক মামলার জট।

এসআই মহসিন চৌধুরীকে ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

তার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ২০১৭ সালে আইজি ব্যাজ, লক্ষীপুর জেলায় ৩৮ বার পুরষ্কার লাভ করেন। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চলে আসেন সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে। এখানেও তিনি স্বাক্ষর রাখেন তার বিচক্ষণতার। সততা নিষ্ঠায় তিনি অল্পদিনে ভরসার নাম হয়ে ওঠেন। যার ফল হিসেবে কক্সবাজারে যোগদানের ১৪ মাসের মাথায় ২০২২ সালে আবারো পান আইজি ব্যাজ। এছাড়াও কক্সবাজার জেলায় ৩০ মাসে ২৬ বার শ্রেষ্ঠত্বের পুরষ্কার পেয়েছেন।

এসআই মহসিনকে পিপিএম পদক পরিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তারই ধারাবাহিকতায় এবার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি এবার ঘোষিত হয়েছিলেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক “প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল” এ। এটি একটি বিরল সম্মাননা। তার জন্ম চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানাধীন কানাই মাদারী গ্রামে। ৪ বোন ১ ভাইয়ের সংসারে মা-বাবা দুই জনই পৃথিবীতে বেঁচে নেই।