সংরক্ষিত নারী আসন: নতুনদের পাশাপাশি দৌড়ে সাবেকরাও

সাজ্জাদুল ইসলাম :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন সংগঠনের নেত্রীরা। নতুনদের পাশাপাশি সাবেকরাও রয়েছেন এ দৌড়ে। গত দুই মেয়াদে নারী সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এমপিরাও জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকার নেতা ও এমপিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা।

সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল হতে পারে আগামী সপ্তাহে। ইসির পক্ষ থেকে গত ১৬ জানুয়ারি এ ধারণা দেওয়া হয়। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের ভোট হবে। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হচ্ছে ৩০ জানুয়ারি।

সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সরাসরি ভোটে। নতুন সংসদে আওয়ামী লীগ ২২৩টি এবং জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। ৬২ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সে হিসাবে সংসদে আওয়ামী লীগ ৩৭টি, জাতীয় পার্টি ২টি, অন্যান্য ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য মনোনীত করতে পারবেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আন্দোলন সংগ্রামে দলের জন্য নিবেদিত সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী, সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকা শিল্পী, দলের জন্য ভূমিকা রাখা প্রয়াত নেতার পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার নারী নেত্রীরাও জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। অনেকেই দলীয় নীতিনির্ধারক ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। এদের মধ্যে একাদশ সংসদ বা তার আগের সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিতরাও রয়েছেন। এমনকি দলের মনোনয়ন নিয়ে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছেনÑ এমন কয়েকজনও জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। নেতাদের কাছে তারা তুলে ধরছেন নির্বাচন ও আন্দোলন সংগ্রামে দলের পক্ষে তাদের ভূমিকার কথা।

ধারণা করা হচ্ছে, যারা দল থেকে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হতে পারেননি, তারা আর সংরক্ষিত আসনে এমপি মনোনয়ন পাবেন না। তবে মানিকগঞ্জ-২ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম এবার সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর আগেও তিনি সংরক্ষিত আসনে মনোনীত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ দলের মনোনয়ন পেলেও দ্বৈত নাগরিকত্বের জটিলতায় নির্বাচন করতে পারেননি। সংরক্ষিত নারী আসনের আলোচনায় তার নামও শোনা যাচ্ছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তারানা হালিম, সানজিদা খানম, মেরিনা জাহান, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, সিলেটের প্রয়াত মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী আসমা কামরান, যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, বর্তমান সভাপতি ডেইজি সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলিসহ অনেকে রয়েছেন সংরক্ষিত আসনে সংসদে যাওয়ার দৌড়ে।

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নাটোর-৪ আসনের প্রয়াত এমপি আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য নেহরিন মোস্তফা দিশি, শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী-উদ্যোক্তা শমী কায়সারও আছেন আলোচনায়। সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান সরাসরি নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হলেও তাকে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের মাধ্যমে সংসদে দেখা যেতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে প্রতিবারের মতো এবারও এগিয়ে রয়েছেন তারকাশিল্পীরা। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, তানভীন সুইটিসহ বেশকিছু পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের জন্য কয়েকটি আসন ছাড় হতে পারে বলে জানা গেছে। সরাসরি নির্বাচনে ১৪ দলের নেতারা আশানুরূপ বিজয় না পাওয়ায় সংসদের তাদের প্রতিনিধিত্ব কমে গেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার পপি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও দলের মনোনয়ন বোর্ড অবশ্যই স্মার্ট নারীদের মনোনীত করবেন। সেই নারীরা দেশ গড়ার ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজি সরোয়ার বলেন, এবার আমাদের দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। সেজন্য আমি মনে করি, সংসদে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের স্মার্ট উপায়ে কাজ করতে হবে। নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছি না। তবে অনেকেই সেটা করছে। আমি দলের জন্য কাজ করেছি। কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করিনি। এখন নেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে সুযোগ দেন, তাহলে আমি নারী সমাজ ও দেশের জন্য আরও কাজ করতে আগ্রহী। আমার চাওয়া-পাওয়ার বিশেষ কিছু নেই।