ইয়াবার আগ্রাসন বেড়েছে কক্সবাজারের উপকূলজুড়ে

মুহিবুল্লাহ মুহিব, বার্তা ২৪

সড়কপথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে সাগরপথে পাচার হচ্ছে ইয়াবার বড় বড় চালান। প্রতিনিয়ত আটকও হচ্ছে ইয়াবার চালান। সাগর উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী হয়ে উঠেছে বিশাক্ত মাদক ইয়াবা পাচারের নতুন ঘাট হিসেবে। আর এর নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রভাবশালীরা।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু চৌফলদণ্ডী নয়, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, পিএমখালী, বাংলাবাজার, মহেশখালীর কালারমারছড়া, হোয়ানক, পেকুয়ার মগনামাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার কোনো না কোনো পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার বড় বড় চালান প্রবেশ করে।

পরে সেগুলো লবণ ও মাছের ট্রাকে করে চলে যায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, নারায়গঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আর এসব পাচার চক্রে রয়েছে একঝাঁক প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ী। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব চক্রে নেতৃত্বে রয়েছে চৌফলদণ্ডীর মো. ইলিয়াছের ছেলে বিএনপি নেতা রাসেল মেম্বার, মৃত ইসলামের ছেলে গিয়াস উদ্দিন ও জিয়াবুল হক।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, লবণ ব্যবসায়ী থেকে ইয়াবার হাত ধরে কোটিপতি হয়ে উঠেন গিয়াস উদ্দিন। লবণের ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় তার ইয়াবার চালান। তার সাথে রয়েছেন মো. ইব্রাহীমের ছেলে দিদার, আলী হোসেনের ছেলে মো. হোসেন, কালা মিয়ার ছেলে মইনু। গিয়াসকে টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান পাটায় বাচ্চু চকিদারের মেয়ে ইনু আক্তার।

একই এলাকার বিএনপি নেতা রাসেল মেম্বার। রাসেলের নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন সিকদার পাড়ার মনসুর আলমের ছেলে মো. ইমরান, উত্তর পশ্চীম পাড়ার মনির আহমদ মেম্বারের ছেলে জিয়াবুল হক। আর কিউবা রাখাইনের রয়েছে বড় একটি সিন্ডিকেট। তাছাড়াও তিনি প্রশাসনের তালিক্তাভুক্ত মাদক কারবারি।

এসব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় মালয়েশিয়ায় মানবপাচার, ইয়াবা পাচার ও একাধিক মামলা রয়েছে।

এলাকাবাসী বলছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে চলছে এসব ইয়াবা পাচার। তাদের সহযোগিতায় সাগরপথে চালান এনে চৌফলদণ্ডী ব্রিজ হয়ে খামার পাড়ার পূর্বে ঝাম মিয়ার ঘোনায় আস্তানা স্থাপন করে। সেখানে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।

অভিযুক্ত রাসেল মেম্বার বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসা করি না। মানব পাচার, ইয়াবা পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করি। প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি। কিন্তু কিউবা রাখাইনের একটি চালানের খবর প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চৌফলদণ্ডীর মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার বলে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। সম্প্রতি একটি ইয়াবার চালান প্রবেশের খবর সদর থানায় জানাই। ঐ সময় পুলিশ আসলে মাদক পাচারকারিরা পালিয়ে যান। এরপর থেকে ঐসব মাদক ব্যবসায়ীরা আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন।’

কক্সবাজারে র‌্যাব-১৫ এর সিপিএসসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘র‌্যাব কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান জোরদার করেছে। প্রতিনিয়ত বড় বড় চালান আটক হচ্ছে। তবে সাগর উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও বাড়তি নজর রাখছে র‌্যাব।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘শুধু একটি এলাকা নয়, কক্সবাজারের প্রত্যেক এলাকায় পুলিশের অভিযান চলছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে যে সকল ব্যবসায়ীর কথা বলা হচ্ছে, সেই তথ্য আমাদের কাছে অবশ্যই আসবে।’

তিনি বলেন, ‘টেকনাফে যে অভিযান চলমান রয়েছে, সে ধরনের অভিযান উপকুলীয় এলাকাগুলোতেও চালানো হবে। ইয়াবার বিস্তার যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে চাই পুলিশ।’