উখিয়ায় জীবিত আপন ভাইকে মৃত বানিয়ে কোটি টাকার সম্পত্তি ভোগদখল

জাহাঙ্গীর আলম, (ইনানী) উখিয়া ◑

কলিম উল্লাহ, বয়স ৭০ ছুই ছুই। যার জীবনের অর্ধেকের বেশী সময় বিদেশে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধ এই মানুষটির বাড়ি উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের মধ্যম নিদানিয়া গ্রামে। তার পিতা মৃত নজির আহমদের ৪ ছেলে ৩ মেয়ে।

ছেলেদের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে দায়িত্বও ছিলো বেশী। যার কারণে পরিবারের ঘানি টানতে অল্প বয়সেই পাড়ি জমান বিদেশে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংসার ও ভাইদের জন্য টাকা পাঠাতেন। আর সেই ভাইয়েরা পিতার মৃত্যুর পরে সম্পত্তির লোভে পিতৃতুল্য আপন বড় ভাইকে মৃত সাজিয়ে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ বানিয়ে সম্পত্তি নিজেদের নামে করে নিয়েছেন এমন অভিযোগ বয়োবৃদ্ধ কলিম উল্লাহ ও এলাকাবাসীর।

বয়োবৃদ্ধ কলিম উল্লাহ অভিযোগ করে জানান, তিনি বিদেশ থাকাকালীন শারিরীক অসুস্থতাজনিত কারণে নিজের জন্য কিছুই করতে পারেননি। যা ইনকাম করতেন তার সিংহভাগই পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার আপন ভাইদের অন্ধের মত বিশ্বাস করতেন। যার কারণে কখনোই সম্পত্তির হিসাব জানতে চাননি। কিন্তু যখন দেশে আসে তখন জানতে পারেন ভাইদের এই কুকৃর্তি। আর তাদের এই কুকৃর্তির প্রতিবাদ করলেই ভাইয়েরা তাকে পাগল বলে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বিষয়টি সাবেক আনোয়ার চেয়ারম্যানের কাছে বিচারাধীন থেকেও বিচার পাইনি। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে বিচার দিলে অলি উল্লাহরা বিচারে আসেনা নাহয় সময় দেইনা। জনপ্রতিনিধিদের ধারে ধারে ঘুরতে ঘুরতে তিনি আজ ক্লান্ত। উপযুক্ত বিচারের আশায় চেয়ে আছেন প্রশাসনের প্রতি।

স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বয়োবৃদ্ধ কলিম উল্লাহর অভিযোগ পুরোটাই সত্যি। তার আপন ভাইয়েরা তাকে মৃত সাজিয়ে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ বানিয়ে সম্পত্তি নিজেদের নামে খতিয়ান করে নেয়। উক্ত সম্পত্তি থেকে অধিকাংশ জমি অন্যের কাছে লিজ দিয়ে বছরে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করলেও তা থেকেও কলিম উল্লাহকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

পরবর্তীতে কলিম উল্লাহ তার পৈত্রিক সম্পত্তি দাবী করলে তাকে পাগল বলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এমনকি তার বাপের ভিটেতেও থাকতে দেয়নি।

এদিকে, বয়োবৃদ্ধ কলিম উল্লাহর সংসার সৌদি আরবে হওয়ায় এইখানে তার থাকার কোন জায়গা নেই। তিনি সংসার ছেড়ে এসেছেন আজ অনেকদিন। এমতাবস্থায় বয়োবৃদ্ধ কলিম উল্লাহর থাকার জায়গা না থাকায় কোনো উপায়ন্তর না দেখে অপরের বাড়ির উঠানে রাত কাটায়। কখনো কেউ সহানুভূতি দিয়ে খেতে দিলে খায় নাহয় থাকতে হয় উপোস।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, বয়োবৃদ্ধ কলিম উল্লাহর তিন ভাই অলি উল্লাহ, আবদুল্লাহ (প্রকাশ মাহমুদউল্লাহ) ও হাবিবুল্লাহ অপরের জমি নিজেদের নামে করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যায়। এছাড়া তারা আরো অনেক অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত ও তাদের রয়েছে জালিয়াতির ফাদঁ।
তারা সৌদি আরবের বিভিন্ন দানশীল শেখদের সাথে পরিচয় হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ, মাদ্রাসা, টিউবওয়েল করার নাম দিয়ে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে কোটি টাকা এনে অন্যজনের করা মসজিদ, মাদ্রাসায় টিউবওয়েলে সাইনবোর্ড লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা এনে হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হুন্ডি ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এলাকায় তাদের টাকার প্রভাব থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চাইলে বিভিন্ন হুমকিধামকি দিয়ে থাকে। যাতে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস না পায়।

বয়োবৃদ্ধ কলিম উল্লাহর অভিযোগে আরো জানা যায়, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোড হওয়ায় তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির দাম বেড়ে কোটি টাকায় দাড়ায়। সম্পদের লোভে আমাকে মৃত বানিয়ে অবৈধ কাগজ পত্র তৈরি করে। যার খতিয়ান নম্বর হলো ৩৭৫৬,৬৮৬২ অলি উল্লাহর নামে,৬০৬৮,৪৫৭৮,৭৩১৫ খতিয়ান আব্দুল্লাহ ও হাবিবুল্লার নামে তৈরি করে। এছাড়া মধ্যম নিদানিয়ায় ৫ তলা ফাউন্ডেশনের দোকান বাড়ি, মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আছে যা তারা ভোগ করে আসছে। টাকার অভাবে সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বয়োবৃদ্ধ কলিম উল্লাহর।

সম্পত্তি ভোগদখলের ব্যাপারে কলিম উল্লাহর ছোট ভাই আবদুল্লাহ’র সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বিচারে যা সিদ্ধান্ত হবে তাই মেনে নিবেন বলে তাড়াহুড়ো করে বাইকে উঠে চলে যান।

এ বিষয়ে ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলিম উল্লাহর পৈত্রিক ভাগের সম্পত্তি তার ভাইয়েরা ভুয়া ওয়ারিশ সনদ করে নিজেদের নামে করে নিয়েছে এই ব্যাপারে শুনেছি। স্থানীয়ভাবে এটি মীমাংসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ভুয়া ওয়ারিশ সনদ কিভাবে তারা পেয়েছেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে যারা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন তারা ভুয়া ওয়ারিশ সনদ বানিয়ে দিয়েছেন, এতে আমার হাত নেই।

জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে,আমার জানামতে এইরকম কোনো ওয়ারিশ সনদ আমি দেইনি। যদি ঘটনাটি সত্যি হয়ে থাকে তবে আমি তদন্ত সাপেক্ষে ওয়ারিশ সনদটি বাতিল করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।