উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বেওয়ারিশ নবজাতকের লাশ

ডেস্ক রিপোর্ট •

উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলছে ডাস্টবিন কিংবা ফুটপাতে পড়ে থাকা নবজাতক উদ্ধারের ঘটনা। এসব নবজাতক কখনও মিলছে জীবিত, আবার কখনও মিলছে মৃত। গত তিন বছরে এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে শতাধিক। তবে এখন পর্যন্ত একটি ঘটনারও তথ্য উদঘাটন হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার যশোরের অভয়নগরে মিললো আরেকটি নবজাতকের মরদেহ। অভয়নগর থানার পরিদর্শক মিলন কুমার মণ্ডল জানান, ওই এলাকার খেজুর বাগানের ঝোঁপের ভেতরে বাজার করা একটি ব্যাগের মধ্যে কাপড় দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় নবজাতকটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিশুটির কোনো পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

পরিচয়হীন এসব নবজাতক উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ বলছে, জাতীয়ভাবে ডিএনএ ব্যাংক করা গেলে সহজেই পরিচয় জানা যাবে। সমাজবিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের মতে, যে সংস্থাগুলো শিশুদের লালন-পালন করে, কথিত বাবা-মার উচিত শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে না দিয়ে সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হাতে তুলে দেয়া।

এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পানির পাম্পের সামনে থেকে কাপড়ে মোড়ানো একটি নবজাতকের (মেয়ে) মরদেহ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা করলেও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

গত ৫ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আরেকটি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ-১ এলাকায় রাস্তার উপর একটি কাপড়ের শপিং ব্যাগ থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। উদ্ধার করা ট্রাফিক সার্জেন্ট সমরেশ মণ্ডল বলেন, ব্যাগ খুলতেই কেঁদে ওঠে নবজাতক। ব্যাগের ভেতর ওই নবজাতককে কে বা কারা রাস্তায় ফেলে গেছে, সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১টির মতো অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃত নবজাতকের দেহ রাস্তা, ডাস্টবিন, ঝোপঝাড় ও পরিত্যক্ত বাস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিলো ৪২টি, ২০১৮ সালে ২৪টি এবং ২০১৭ সালে ১৭টি।

বাংলাদেশ আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী বলেন, সাধারণত অনৈতিক সম্পর্কের ফসল এসব শিশু। কিন্তু উচ্চবিত্তের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের উদাহরণ থাকলেও নিম্নবিত্ত এবং ভবঘুরে মানুষদের সেই সতর্কতা নেই। সাধারণত কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে পরিবার অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় পুলিশের কাছে। কিন্তু যখন পরিবারই নিজ সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়, তখন অভিযোগ করার কেউ থাকে না। তাই যেসব সংগঠনরা কাজ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শিশুদের জন্ম হওয়া ও ভলান্টিয়ারি দিয়ে দিতে পারে। তাহলে একটি নবজাতকে ফুটপাতে ময়লার স্তূপে পড়ে জীবন দিতে হয় না।