কক্সবাজারে বলাৎকারের মামলায় ৭ বছর কারাদন্ড

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

নয় বছরের শিশুকে বলৎকার করার মামলায় এক বলৎকারকে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার গত বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) এ রায় ঘোষণা করেন।

কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক ইলাহী শাহজাহান নুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

দন্ডিত আসামী হলো : কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং নুরজালী বাপের পাড়ার জাফর আলমের পুত্র মোঃ কায়ছার প্রকাশ মধু (২২)। দন্ডিত আসামী পলাতক রয়েছে।

রাষ্ট্র পক্ষে এপিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমদ এবং আসামীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মো: নুর সোলতান আদালতে মামলাটি পরিচালনা করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং নুরজালী বাপের পাড়ার মৌলভী মাহমুদুল করিম ও রহিমা বেগমের পুত্র, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রাশেদুল ইসলাম ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাত ৯ টার দিকে বাড়ির পাশে জমিতে মাছ ধরার জন্য আগে থেকে জাল পেতে রাখা জালে মাছ পড়েছে কিনা দেখতে যায়। এসময় আসামী মোঃ কায়ছার প্রকাশ মধু শিশু রাশেদুল ইসলামকে জোর করে বলৎকার করে। বলৎকার করতে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে যায় ৯ বছরের শিশু রাশেদুল ইসলাম। এসময় শিশু রাশেদুল ইসলাম এর শোর চিৎকারে তার আত্মীয় স্বজন এগিয়ে আসলে আসামী মোঃ কায়ছার প্রকাশ মধু পালিয়ে যায়।

বলাৎকারের শিকার হওয়া শিশু রাশেদুল ইসলামকে আহত অবস্থায় তার স্বজনেরা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং পরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তাকে চিকিৎসা সেবা দেন। হাসপাতালে চিকিৎসকগণ রাশেদুল ইসলামকে পর্যবেক্ষন ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে বলৎকারের চিহ্ন ও আলামত দেখতে পান।

এ ঘটনায় শিশু রাশেদুল ইসলামের মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে কুতুবদিয়া থানায় ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩৭৭ ধারায় অস্বাভাবিক কর্ম করার অপরাধ এনে মোঃ কায়ছার প্রকাশ মধুকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার কুতুবদিয়া থানা মামলা নম্বর : ০৫, তারিখ : ২২/০৯/২০১৫ ইংরেজি, যার জিআর মামলা নম্বর : ৮৪/২০১৫ ইংরেজি (কুতুবদিয়া)।

বিচার ও রায় :

মামলার আসামী মোঃ কায়ছার প্রকাশ মধুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তিনি দোষ স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) আসামী মোঃ কায়ছার প্রকাশ মধু’র বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী আদালতে চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বিচারের জন্য মামলাটি চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণকারী কুতুবদিয়া চৌকি আদালতের তৎকালীন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বর্তমানে রাঙ্গামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, চিকিৎসা সনদ প্রদানকারী চিকিৎসক সহ আদালতে ৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও তাঁদেরকে আসামীর পক্ষে জেরা করা হয়। এছাড়া, চিকিৎসা সনদ, আলামত প্রদর্শন ও পর্যালোচনা, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলাটির সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিজ্ঞ বিচারক কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার ১২ অক্টোবর মামলটি রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন।

রায় ঘোষণার দিনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার ১৮৬০ সালের ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩৭৭ ধারায় আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অস্বাভাবিক কর্মের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামী মোঃ কায়ছার প্রকাশ মধুকে দোষী সাব্যস্থ করে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং একইসাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।

বিজ্ঞ বিচারকের পর্যবেক্ষন :

রায়ে বিজ্ঞ বিচারক কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার তাঁর পর্যবেক্ষনে বলেন, “এটি একটি ঘৃণ্য অপরাধ। ঘটনার সময় ভিকটিমের বয়স ছিলো ৯ বছর। মামলার ঘটনাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারার আওতায় পড়ে। উক্ত আইনে মামলা হলে আসামীর আরো সাজা হতো।”

দন্ডিত আসামী পলাতক থাকায় রায়ে আসামীর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যুর আদেশ দেওয়া হয়। আসামীকে গ্রেপ্তার করে সাজা কার্যকর করার জন্য সাজা পরোয়ানা কুতুবদিয়া থানায় প্রেরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ আমির হোসেন জানিয়েছেন।