কক্সবাজার কমেছে কিছু নিত্যপণ্যের দাম: নিয়মিত বাজার তদারকির দাবি ভোক্তাদের

মোহাম্মদ সোহেল রানা :

দেশে বর্তমানে সরবরাহ সংকট না থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রমজানকে সামনে রেখে বাড়তি মুনাফা পেতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে ১১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পবিত্র রমজানে এর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। যার ফলে নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।

বুধবার (২০ মার্চ) কক্সবাজার শহরের বড় বাজার ঘুরে কিছু কিছু পণ্য আগের তুলনায় কম মূল্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে আমদানির খবরে এরই মধ্যে খুচরা বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ!

২ দিন আগে যেখানে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে কেজিতে ১৩০-১৪০ টাকায়, দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায়। এখন তা পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় ৭০/৭৫ টাকা আর দেশি ৬৫/৭০ টাকায়। ছোলা, চিনি তেল এখনো আগের মূল্যে বিক্রি হলেও কিছুটা স্বস্তি এসেছে সবজি ও মাংসের বাজারে।

বড় বাজারের বেশ কিছু দোকান ঘুরে দেখা যায়, রমজানের শুরুতে যে দামে সবজি বিক্রি হয়েছে তা এখন অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।

সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায় ৭০-৮০ টাকার শসা ৪০ টাকায়, ৭০-৮০ টাকার বেগুন ৩০ টাকায়, ৫০-৬০ টাকার আলু ৪০ টাকায়, ৫০-৬০ টাকার টমেটো ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত কয়েকদিনের তুলনায় অধিকাংশ পণ্যে দাম কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের দূর্ভোগ কমার পাশাপাশি কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
অন্যদিকে মাংসের বাজারে দাম নিয়ে রমজানের শুরুতে অস্বস্তি ছিল অনেক। এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানা যায়।

এ-নিয়ে মাংস বিক্রেতা মিন্টুর জানান, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী তাদের একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং তারা সে দামেই বিক্রি করে আসছেন।

তবে সাইফুল নামের একজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, পৌর সভার নির্ধারিত মূল্যে এখন বিক্রি করলেও কয়েকদিন আগেও তারা কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা বেশি নিয়েছে।

জানা যায়, পৌর কতৃপক্ষ গরুর মাংস হাড়সহ কেজিতে ৭০০ টাকা, ছাগীর মাংস ৮৫০ টাকা আর খাসির মাংস ৯৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

এদিকে পেঁয়াজ সহ সবজির বাজারে দাম কমে আসায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন শহরের পাহাড়তলী এলাকার নুরুল আমিন নামের এক দিনমজুর।

তিনি বলেন, রমজান মাস শুরুর ১ দিন আগে থেকে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল তাতে আমাদের মতন নিম্ন আয়ের মানুষের অনেক কষ্ট হয়েছে। আজকে পরিবারের জন্য বাজার করতে এসে পেঁয়াজ সহ সবজির দাম কম হওয়াতে অনেক আনন্দ লাগছে বলে জানান।

ক্রেতা রোজিনা বেগম বলেন, আমি একজন বিধবা নারী। সংসারে ৩ মেয়ে ১ ছেলে নিয়ে আমার সংসার। ব্যবসায়ীরা রোজার মাসে যেভাবে জিনিসের দাম বৃদ্ধি করেছে তাতে আমাদের সংসারে অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক সময় আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে বাজার করতে হচ্ছে। তবে আজকে কিছু কিছু জিনিসের দাম কম হওয়ায় কিছুটা সরকার কে ধন্যবাদ জানান এবং বাজার মনিটরিং আরও বৃদ্ধি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান।

শহরের বাহারছড়া একজন সরকারি কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা কোন অংশে কসাই থেকে কম না! তারা সুযোগ বুঝে আমাদের উপর জুলুম করে।তাদের সিন্ডিকেট শক্তিশালী হওয়াতে অনেক সময় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার কেও বেগ পেতে হয়। সবজির বাজারে যেমন স্বস্তি এসেছে অন্যান্য দ্রব্যমূল্যেও যেন স্বস্তি আসে সে প্রত্যাশা করেন তিনি।
এদিন আরও কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, বড় বাজার সহ আশেপাশের সকল বাজারে একেক দোকানে একেক দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। তাঁরা জেলা প্রশাসনকে আরও কঠোর হয়ে বাজার মনিটরিং করার আহবান জানান।

পণ্যের মূল্যে ভিন্নতা কেন এবং এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজার দোকান মালিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহমদ বলেন, পণ্যের গুণগত মানের কারণে এমনটা হয়ে থাকে আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরাও এমনটা করে থাকেন বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, আমরা সকল দোকান মালিক কে মিটিং করে জানিয়ে দিয়েছি নির্ধারিত মূল্যে যেন পণ্য বিক্রি করা হয়। যদি কেউ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে, আমাদের অভিযোগ দিলে আমরা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ভ্রম্যমান আদালত পরিচালনা করতে তিনি জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এব্যাপারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার এক্সিকিউটিভ মেজিস্ট্রেট শারমিন সুলতানা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইতিমধ্যে আমাদের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাজার ও প্রতিষ্ঠানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং অনেককে অর্থদন্ড (আর্থিক) জরিমানা করা হয়েছে। তিনি তাদের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান।

বাজারের মূল্যতালিকা হালনাগাদ ও মনিটরিং এর দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, আমরা প্রতিদিন কোন না কোন বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যাচ্ছি। অনেক দোকানদারকে আর্থিক জরিমানা করে আসছি। তারপরও দেখা যায় অনেক ব্যবসায়ীরা আমাদের সাথে লুকোচুরি খেলে। সত্যি বলতে ব্যবসায়ীদের মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। এখানে আমরা তো শুধু পাহারা দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।

কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যবয়াসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে আগামীতে আরও জোরালো ভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শাহজাহান আলী।