করোনাকালে হঠাৎ অশান্ত মহেশখালী দ্বীপ: এক সপ্তাহে ৪ খুন

তোফায়েল আহমদ,কালেরকন্ঠ ◑

ফাইল ছবি

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালীতে সাম্প্রতিক সময়ে খুনোখুনির ঘটনা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে। দ্বীপে গত এক সপ্তাহেই একজন কলেজ ছাত্র ও অপর একজন মেধাবী স্কুল ছাত্রীসহ ৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তুচ্ছতাচ্ছিল্য থেকেই ঘটেছে বেশীর ভাগ ঘটনােএছাড়া হঠাৎ বেড়েছে মাদক পাচারের ঘটনাও।

একদিকে পবিত্র রমজান এবং অপরদিকে করোনাকালে খুনোখুনি ও মাদক পাচারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপের সচেতন লোকজনও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন জানান, সাগর আর পাহাড়ের লীলাভূমিতে যেখানে মেজাজ শান্ত থাকার কথা সেখানে করোনার লকডাউনে মহেশখালীতে প্রতিদিন ঘটছে গৃহবিবাদ। তুচ্ছ কারণেই একজন আরেকজনের মাথায় আঘাত করছে।’

পুলিশ সুপার দুঃখের সাথে বলেন, একটি হত্যা মামলার জন্য অনেক অতি উৎসাহী ব্যক্তি অপেক্ষা করে থাকেন। ঘটনা একটি ঘটলেই প্রতিপক্ষ জড়িত থাকুক আর নাই থাকুক যে কোনোভাবে তাদের আসামি করা হয়। অবস্থা এমনই যে, খুনের ঘটনায় প্রকৃত খুনি থাকেন ৩/৫ জন অথচ মামলায় আসামি করা হয় ৫০/৬০ জন। এভাবেই একটি জঘন্য হত্যা মামলার বারটা বাজিয়ে দেয়া হয়।

মহেশখালী দ্বীপের এসব খুনের ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি ঘটনার টানা ৫ দিন পরেও থানা কর্তৃপক্ষ হত্যা মামলা গ্রহণ করছে না বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। হত্যা মামলায় স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে আসামি করায় পুলিশ মামলা নিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত কলেজ ছাত্রের পরিবার।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে গত ২ মে দ্বীপের শামলাপুর ইউনিয়নের জেএম নয়াপাড়া গ্রামে। প্রেম ঘটিত ঘটনার জের ধরে মেহেদী হাসান মিরাজ (২১) নামের কলেজ ছাত্রকে প্রতিপক্ষ বেদম মারধর করে। পরের দিন চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহিত মেহেদী ছিলেন পটিয়া সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।

এ ব্যাপারে মহেশখালী থানায় নিহত কলেজ ছাত্রের পরিবারের পক্ষে থানায় মামলা নিয়ে গেলে ওসি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান। নিহত কলেজ ছাত্র মিরাজের ভাই আবু হানিফ অভিযোগ করেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওসমানের হুকুমেই তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, দেখুন যে সব লোকজন এ ঘটনায় জড়িত নন সেসব ব্যক্তিকেও আসামি করা হচ্ছে তাই আমি সঠিক তথ্য দিয়ে অভিযোগ দিতে বলেছি মাত্র।

তিনি বলেন, মোহাম্মদ ওসমান নামের স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে ঘটনায় জড়িত করা হচ্ছে অথচ তিনি ঘটনার সময় ইউনিয়ন পরিষদের একটি সভায় ছিলেন। ওসি ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে এ বিষয়টি জেনেই বাদী পক্ষকে সঠিক ব্যক্তিদের আসামি করার জন্য পরামর্শ দেন বলে জানান তিনি।

ওদিকে কলেজ ছাত্র হত্যার ঘটনায় থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নেওয়ার প্রতিবাদে শনিবার দ্বীপে বিক্ষুব্ধ লোকজন মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসুচিতে দ্বীপের সাধারণ লোকজন ছাড়াও বহু সংখ্যক ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী যোগ দেন। শনিবার বিকালে শাপলাপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় ছাত্ররা অবিলম্বে হত্যা মামলাটি রেকর্ড করার জন্য দাবি জানান। নিহতের ভাই আবু হানিফ জানান, ঘটনার পর থেকে এখনো পযন্ত অদৃশ্য কারণে মামলা হয়নি। এদিকে হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘোরা ফেরা করায় নিহতের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

অপরদিকে একই ইউনিয়নে শুক্রবার দিবাগত রাতেও খুন হয়েছে একজন মেধাবী স্কুল ছাত্রী। রাস্তার পাশে রাতে ক্যারম খেলার সময় গায়ে পানি পড়ার মত তুচ্ছ ঘটনায় কাউসার নামের একজন বখাটের এক লাথিতেই নাসিমা আকতার (১৫) নামের একজন স্কুল ছাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। নিহত নাসিমা স্থানীয় শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী।

এর আগে গত ৬ মে দ্বীপের মাতারবাড়িতে মোহাম্মদ ইলিয়াছ নামের এক জেলে খুন হয়েছেন। গত ৪ মে দ্বীপের বড় মহেশখালীতে আরেক তুচ্ছ ঘটনায় নিহত হন আরেক ব্যক্তি।

এছাড়া করোনাকালে মহেশখালী দ্বীপে বেড়েছে ইয়াবা পাচারের ঘটনাও।গত ৫ই মে ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের ডেইল পাড়া ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওসমান গণির বাড়ি থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকার দেড় লক্ষ ইয়াবা উদ্ধার হয়।যা মহেশখালীর ইতিহাসে ধরা পড়া সর্বোচ্চ ইয়াবার চালান এটি।