টেকনাফে ছাড় দিচ্ছেনা কেউই

আজিম নিহাদ ও আব্দুল মতিন ডালিম :


উখিয়ায় কথিত বদি ক্যারিশমায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ‘বিদ্রোহী’ মুক্ত হয়ে বিজয়ের মুখ দেখলেও টেকনাফে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। ইতোমধ্যেই ত্রিমুখী লড়াইয়ের কথা সীমান্তে জনে জনে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, ঘরের মধ্যেই ভোট ভাগাভাগিতে হেরে যেতে পারে নৌকা!
টেকনাফ উপজেলা নির্বাচনে ইতোমধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার টেকনাফে নৌকা প্রতীকের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাফর আহমেদ এবং টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম। তিনজনই এক ঘরের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা।
টেকনাফে রাজনীতি সচেতন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জনপ্রিয়তার বাজারে বর্তমানে তিনজনই সমানে-সমান। কেউ কারও থেকে কম নয়। রাজনৈতিক অবস্থান যেমন শক্ত, তেমনি জনসম্পৃক্ততায়ও প্রত্যেকে কাছাকাছি। তাই শেষ পর্যন্ত তিনজনই মাঠে থাকলে ত্রিমুখী লড়াই জমে উঠবে নাফনদীর পাড়ে। 
নির্বাচনের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা হলে তারা উখিয়ার মত টেকনাফেও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নির্বাচনীয় ক্যারিশমা প্রত্যাশা করেন। এছাড়াও দলীয় স্বার্থে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের আহ্বান জানান। 
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টেকনাফে খোদ আওয়ামী পরিবারই কয়েক ভাগে বিভক্ত। উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর পক্ষে মাঠে আছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক একটি অংশ, উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আলমের পক্ষে। আবার উপজেলা আওয়ামী লীগের বদিপন্থী একটি অংশ ও শ্রমিক লীগের কিছু নেতাকর্মীরা রয়েছে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আহমেদের পক্ষে। এর মধ্যে দলের নেতাকর্মীদের অংশ নুরুল আলমের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভারী। 
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীকে বাদ দিয়ে আগামী ১১ মার্চ টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ। এই সভা ডেকে ইস্যু করা চিঠিতে নাম উল্লেখ রয়েছে সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরের। চিঠিতে এজেন্ডা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন উল্লেখ থাকলেও কোন প্রার্থীর পক্ষে সভা আহ্বান করেছেন কিনা সেটি স্পষ্ট নয়। তবে আওয়ামী লীগের একটি অংশের দাবী, সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলীকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আলমের পক্ষে বর্ধিত সভাটি আহ্বান করা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে কোন্দলও চরম আকারে পৌঁছেছে। এতে করে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকেও বেশ দূরে পড়ে গেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।
টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ দৈনিক কক্সবাজারকে জানান, নুরুল আলম দীর্ঘদিন টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর উপজেলা যুবলীগের হাল ধরেছেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগের অভিভাবক তিনি। সাধারণ মানুষের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রলীগ।
তিনি আরও বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করা যাবে না এমন কোন নির্দেশনা নেই। বরং উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাই ছাত্রলীগ নুরুল আলমের পক্ষ নিয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু দু’জনই নির্বাচনীয় কাজে ব্যস্ত আছেন বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। একারণে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত টেকনাফ উপজেলায় বর্তমান ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮০৮ জন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে তিন প্রার্থীই মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। 
সীমান্ত এলাকার ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, মাদক এই অঞ্চলের জন্য অভিশাপ। সামান্য কিছু ব্যবসায়ীর কারণে সবার বদনাম হচ্ছে। আমরা চায়, একটি মাদকমুক্ত টেকনাফ উপজেলা। যে প্রার্থী মাদক নির্মূলে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করবে তাকেই ভোট দেবে তারা।   
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসেম বলেন, প্রতীক দেখে নয়, বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব। 
টেকনাফ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি ও পৌরসভার ভোটার ফরহাদুজ্জামান বলেন, কে দল থেকে বা দলের বাইরে থেকে নির্বাচন করছেন, তা মুখ্য বিষয় নয়। এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং যার দ্বারা এই অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব, আমরা এমন প্রার্থীকে ভোট দেব।