ডিজিটাল ছোয়া পেল না কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার

তুষার তুহিন :

২০১৭ সালের  শেষভাগে কক্সবাজার প্রবেশদ্বার খ্যাত কলাতলীকে নবরুপে সাজাতে ‘কলাতলীর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সৌন্দর্যবর্ধণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহন করে জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের আওতায় কলাতলী মোড় থেকে সৈকত পর্যন্ত  দুই লেনের সড়ক, ফুটপাত নির্মাণ, ড্রেণ নির্মাণ, বাগান তৈরি, যাত্রী ছাউনি, ফ্রি ওয়াই ফাই ও থ্রি ডি সুবিধা সহ জনগনের জন্য নানা অত্যাধুনিক সেবার ব্যবস্থা করা হয়। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। কিন্তু কাজের মাঝখানেই পদোন্নতি পেয়ে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বদলী হন। তাঁর বদলীর পর রাস্তা নির্মাণ শেষ হলেও অন্যান্য কাজ করেনি

বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এবং কক্সবাজার জেলা পরিষদ।সেই কারণেই সৌন্দর্য বর্ধণ এবং ডিজিটাল ছোয়া পায় নি কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার। দ্বিতীয় ধাপের কাজের কথাও অস্বীকার করছে উভয় সংস্থা। আর এই প্রকল্পের বিষয়ে কিছুই জানেন না বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।  

জেলা প্রশাসন, সওজ ও জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, সমুদ্র নগরীতে সড়কপথে আগত পর্যটকদের স্বাগত জানাতে ‘কলাতলীর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সৌন্দর্যবর্ধণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহন করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। দুটি ধাপে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম ধাপে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় দুই লেনের সড়ক, মাঝখানের ডিভাইডার, ফুটপাত, ড্রেন ও কভার। আর এই প্রথম ধাপের কাজ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে সওজ ও জেলা পরিষদ। প্রথমধাপের কাজের মধ্যখানে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বদলী হন।  এরপর জেলা প্রশাসনের নেয়া এই প্রকল্পের খবর রাখেনি কেউ। জানেই না দ্বিতীয় ধাপে যে এই সড়কটি অত্যাধুনিক হওয়ার কথা।  

সরেজমিনে কলাতলী গিয়ে দেখা যায়, কলাতলী মোড় থেকে সৈকত পর্যন্ত দুই লেনের ্একটি রাস্তা রয়েছে।  এর মাঝে ডিভাইডার স্থাপন করা হয়েছে। মোড় থেকে সৈকতের দিকে নামতে হাতের ডানে ড্রেন ও কভার দেওয়া হয়েছে। আর বামে প্রশস্ত সড়ক ও ফুটপাত নির্মিত হলেও তৈরি হয়নি পার্ক, নেই বসার বেঞ্চ ও ওয়াইফাই সুবিধা। থ্রিডি সুবিধারও খোঁজ মিলেনি । ডিভাইডারটিতে সামান্য সবুজের ব্যবস্থা করা হলেও দ্বিতীয় ধাপের কোন কাজই হয় নি।
এই বিষয়ে ‘ আমরা কক্সবাজারবাসীর সমন্বয়ক কলিমউল্লাহ বলেন, সড়কটি প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় বছর খানেক আগে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের কাজ হয়নি। অথচ সড়কটি অত্যাধুনিকতার ছোয়া পেলে বর্হি:বিশে^ কক্সবাজারের মান আরো বাড়ত।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কক্সবাজারের নির্বাহি প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন,  দু’লেনের সড়ক, প্রশস্ত ফুটপাত, ড্রেন ও ড্রেনের কভার এবং ডিভাইডার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এই কাজে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ওই সড়কে আর কোন কাজ নেই।
ডিজিটাল ছোয়া ও বাগান তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, এমন কোন কাজ সওজের করে দেওয়ার কথা ছিল বলে আমার জানা নেই। এটি জেলা প্রশাসকের প্রকল্প । তাই তিনি ভাল বলতে পারবেন এটি কে বাস্তবায়ন করবেন।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ^াস বলেন, প্রকল্পটি জেলা প্রশাসকের। এটি বাস্তবায়নের সময় জেলা প্রশাসন থেকে জেলা পরিষদের সহযোগীতা চাওয়া হয়। আমরা সেসময় ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটির পাশের রাস্তাটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে দেই। ডিজিটাল সেবা কিংবা বাগান নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা  নেই।

কলাতলীর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সৌন্দর্যবর্ধণ’ শীর্ষক প্রকল্প  থেকে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ডিজিটাল ছোয়ার আওতায় আনার কথা। আর ওই ধাপেই ছোয়াতেই বদলে যাবে প্রবেশদ্বার। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে  অত্যাধুনিক  ইন্টারনেট সুবিধা ও আধুনিক থ্রি ডি প্রযুক্তির সব ধরনের  সুবিধা রাখার কথা।  বিশ্ব দরবারে কক্সবাজারকে অনন্য উচ্চতায় নিতে যেতেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সৈকতের দিকে এগুতেই হাতের বামপাশে দৃষ্টিনন্দন পার্ক করা হবে। সেখানে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রামের জন্য চেয়ার ও ছাউনির ব্যবস্থা থাকবে। পর্যটকরা ওই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বসেই সমুদ্র দর্শন করতে পারবেন। এছাড়া দুই লেনের মাঝখানে সৌন্দর্য বর্ধন করা হবে। পাশাপাশি উন্মুক্ত ওয়াইফাই সংযোজন সহ অত্যাধুনিক থ্রি ডি সুবিধা ¯হাপন করা হবে।
কিন্তু সাবেক জেলা প্রশাসকের নেওয়া ‘কলাতলীর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সৌন্দর্যবর্ধণ’ শীর্ষক প্রকল্পের কথা জানা নেই বর্তমান জেলা প্রশাসকের। তাই প্রকল্পটির দ্বিতীয় ধাপের কাজ আর আলোর মুখ দেখেনি।

এবিষয়ে কক্সবাজারের জেলা  প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।