প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া সীমান্তের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিংস্রমানব নবী হোসেন!

গিয়াস উদ্দিন ভুলু, কক্সবাজার জার্নাল :

মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা উখিয়া-টেকনাফ ও দু-দেশের এপার ওপার সীমান্তের মাঝখানে বহমান নাফ নদীর সীমান্ত এলাকা জুড়ে ডাকাতি,অপহরণ,মানুষ হত্যা,মাদক,মানব পাচারসহ বহু অপকর্মের হোতা শীর্ষ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী হিংস্র মানব সেই নবী হোসেন এখন নিজের প্রান বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাসী নবী হোসেন উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে গড়ে তোলে তার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপের বেশ কয়েকটি বাহিনী।

সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা তার নেতৃত্বে দু-দেশের এপার,ওপার সীমান্ত এলাকায় গড়ে তোলে নিজস্ব আস্তানা। এরপর তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে ব্যবহার করে ডাকাতি,অপহরণ, মাদক,মানব পাচারসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিলো। পাশাপাশি ওপার সীমান্ত নাফ নদ জলসীমা অতিক্রম করে পাচার হয়ে আসা বড় বড় মাদকের চালান এপার সীমান্তে প্রবেশ করার আগে মাদক ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে তার সাথে চুক্তি করতে হয়।

বিগত দু-বছর আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক যুবককে কুপিয়ে-গুলি করে হত্যা করে নবী হোসেন।

এরপর সীমান্ত প্রহরী বিজিবি সৈনিকরা তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পোস্টার সাঁটিয়েছিল। তখন বিজিবি গণমাধ্যম কর্মিদের জানিয়েছিল দু-দেশের সীমান্তে ইয়াবা ও অস্ত্র পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে নবী হোসেন জড়িত।

সুত্র বলছে ঐ সময় নবী হোসেন বাংলাদেশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কৌশলে ওপার সীমান্তের গহীন পাহাড়ের তার আস্তানায় চলে যায়।

এদিকে একটি সুত্র দাবী করছে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে নিজেদের প্রান বাঁচাতে ওপার সীমান্ত অতিক্রম করে উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র,গুলিসহ অবৈধ ভাবে ২৩ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ করার সময় স্থানীয় জনতার সহযোগীতায় বিজিবির হাতে আটক হয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশ কয়েকজন ক্যাম্প লিডার সে সময় বলেছিলেন বিজিবির হাতে আটক হওয়া ঐ ২৩ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন গ্রুপের সদস্য।

সূত্রটি আরও দাবি করছেন গত শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ড মাঝেরপাড়া এলাকা সংলগ্ন নাফ নদ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল নবী হোসেন। তবে দিনের বেলায় সীমান্ত প্রহরী বিজিবি সদস্যদের কঠোর নজরদারী বুঝতে পেরে সে এপারে আসতে পারেনি।

তাদের ধারনা রাতের অন্ধকারকে কাজে লাগিয়ে হয়তো সে সীমান্ত অতিক্রম করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করছে।

এবিষয়টি নিয়েও স্থানীয়দের দাবি, ওপার থেকে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এর ধাওয়া খেয়ে গত মঙ্গলবার রাতে অথবা বুধবার ভোরে নবী হোসেনের দলের কিছু লোকজনসহ নবী হোসেন বাংলাদেশ ঢুকেছে। আবার নবী হোসেন ক্যাম্পে প্রবেশ করছে এমন কথা শুনা যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা।

হোয়াইক্যং ইউপি স্থায়ী বাসিন্দা সাইফুদ্দিন নামে এক যুবক এক গণমাধ্যম কর্মিকে জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে চলমান সংঘাত থেকে নিজের। প্রান বাঁচাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেন এপারে চলে আসার চেষ্টা করছে। প্রথম দফা চেষ্টা করে নবী হোসেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে ব্যর্থ হয়েছে। তবে রাতের অন্ধকারে একই ইউপির উলুবনিয়া অথবা উনচিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে নবী হোসেন অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য পেয়েছি।

গত ৫ ফেব্রুয়ারী আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির ফেসবুক থেকে নবী হোসেনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তাকে অনেক রকম অস্ত্র ও গোলার ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শোনা গেছে, ‘আমরা মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশকে মেরে এই অস্ত্রগুলো পেয়েছি। আমরা আরও অনেক মালামাল (অস্ত্র) পেয়েছি, যা অন্য ভিডিওতে দেখাব। ও রোহিঙ্গা নওজোয়ান তোমরা আসো,তোমাদের জন্য আমাদের দরজা খোলা আছে।

সে সময় স্থানীয়দের মধ্যে বলাবলি হয়েছিলো, সীমান্তের ওপারে ঢেকিবুনিয়ায় ওই ক্যাম্পটির দখলে নিয়েছিল নবী হোসেনের লোকজন।

কিন্তু ভিডিওটি ফেসবুকে প্রকাশ হওয়ার পরদিনই আক্রমণের শিকার হয় তারা। এরপর সীমান্তের ওপাররের গোলাগুলির যে শব্দ শুনতে পায় এপার সীমান্তবাসী। তা মূলত নবী হোসেনের দলের সাথে আরাকান আর্মি ও আরএসও-এর লড়াই হয়েছে বলে স্থানীয়রা ধারণা করেছিলো।

আবার ঐ দিনের গোলাগুলির বিষয়ে একটি অডিওবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেখানে নিজেকে নবী হোসেন পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেছে, তার দলের লোকেরা আরাকান আর্মি ও আরএসও সদস্যদের যৌথ আক্রমণের শিকার হয়েছে। সেই হামলার মুখে তার দলের লোকেরা পিছু হটে বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে গেলে বিজিবি ও গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়েছে।

এ বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গফুর উদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলছেন, গত মঙ্গলবার রহমতের বিল, আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। কিছু রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশে দিয়েছে গ্রামবাসী। পুলিশ পরে তাদেরকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে দেয়।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, এরা কোন গ্রুপের লোক তা এখনো আমরা জানাতে পারিনি। তাদেরকে অস্ত্র,গুলিসহ বাংলাদেশের সীমানায় পেয়েছে বিজিবি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে,টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, মাঝেমধ্যে নবী হোসেন উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে ঢুকে বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে। টেকনাফের দুর্গম মিজ্জির পাহাড় নামক তার একটি আস্তানা রয়েছে সেখানে রাত কাটায়। নবী হোসেন বাহিনীর কাছে একে-২২ রাইফেলসহ অন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে। নবী হোসেনকে সহায়তা করে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা ১০/১২টি রোহিঙ্গা ডাকাত দল।

  • কে এই নবী হোসেন

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে বর্মি বাহিনীর লাগাতার নির্যাতন সইতে না পেরে এপারে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। সেই রোহিঙ্গা ঢলের সাথে নবী হোসেনও এপারে প্রবেশ করেন। তার জন্মস্থান রাখাইন রাজ্যে মংডু শহরের ঢেকুবনিয়া এলাকায়। তার পিতার নাম মোস্তাক আহমদ।

এপারে চলে আসার পর সে অবস্থান নেয় উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) বি-ব্লকের ৪১ নং শেডে। ২০১৮ সালের শুরুতে সে মাদক পাচারে লিপ্ত হয়।

এরপর ধারাবাহিক ভাবে মিয়ানমার হতে পাচার করে টেকনাফে নিয়ে আসে ইয়াবার বড় বড় চালান। পাশাপাশি অবৈধ টাকার লোভে পোলে রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে গড়ে তোলেন বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী।