চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোনো বিরোধ নিয়ে আবার সংঘর্ষে ছাত্রলীগ

চট্টগ্রাম •

হলের কক্ষ দখল নিয়ে পুরোনো বিরোধের জেরে আবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একটি উপপক্ষের নেতা–কর্মীরা। এ সময় ওই হলের অন্তত ১০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। আহত হন একজন। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ছাত্রদের সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে এ সংঘর্ষ হয়।

বিবদমান উপপক্ষটির নাম ‘বিজয়’। এটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

এর আগে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে আলাওল হলের ৪৪২ নম্বর কক্ষ দখল নিয়ে এ উপপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। ওই সময় ১২ জন আহত হয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে নাছির অনুসারীদের নয়টি ও মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীদের দুটি উপপক্ষ।

আজ সংঘর্ষে আহত ওই নেতার নাম নয়ন মোদক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ–আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তনু মহাজন প্রথম আলোকে বলেন, একজন ইটের আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ৩১ জুলাই কমিটিতে পদ পাওয়া নিয়ে বিজয় উপপক্ষটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আলাওল এবং এ এফ রহমান হলের নেতা–কর্মীরা মিলে একটি পক্ষ। আরেকটি পক্ষের নেতা–কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলে থাকেন। সোহরাওয়ার্দী হলে এই পক্ষের নেতৃত্ব রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, পদবঞ্চিত দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন নেতা। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ।

হলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনো এ এফ রহমান ও আলাওল হলের বেশ কয়েকটি কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নজরুল ইসলামের অনুসারীদের হাতে রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, আলাওল হলে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে ৫৭টি কক্ষ রয়েছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, আগের সংঘর্ষ নিয়ে উত্তেজনা ছিল। এর রেশ ধরে আজ সোহরাওয়ার্দী হলের এক কর্মী আলাওল হলের মাঠে খেলতে গেলে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে।

তবে বিজয় উপপক্ষের আরেক নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াছের অনুসারী মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, তিন ধরে তাঁদের কর্মীদের সোহরাওয়ার্দী হলের কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন, হেনস্তা করছেন। আজ দুপুরে আবার তাঁদের এক কর্মীকে হুমকি দিয়েছেন। এ নিয়ে কথা বলতে তাঁরা বিকেলে সোহরাওয়ার্দী হলে গিয়েছিলেন। পরে সংঘর্ষ বাঁধে।

এ বিষয়ে কথা বলতে সোহরাওয়ার্দী হলে থাকা নেতা–কর্মীদের নেতৃত্ব দেওয়া সহসভাপতি নজরুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেনকে একাধিকবার কল করা হলেও ধরেননি।

এদিকে সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও হাটহাজারী থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর গোলাম কুদ্দুস বলেন, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে দুপক্ষই অবস্থান করছে।