জালিয়াতি মামলায় আইনজীবী জিয়া উদ্দিনকে বাদ দিয়ে আদালতে দেয়া চার্জশীটের শুনানী কাল

ব্যাংকের ভুয়া প্যাড, সীল, স্বাক্ষর, জালিয়াতি করে জামিন

  • #পূণরায় তদন্তের দাবি

কক্সবাজার প্রতিনিধি :


জুডিসিয়াল কার্যক্রমে ব্যাংকের ভুয়া প্যাড, সীল, স্বাক্ষর, নাম ও পদবী সৃজন করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জাল ব্যাংক গ্যারান্টি অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় একজন আইনজীবী আসামিকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা, আগামীকাল ২০ মার্চ কক্সবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে উক্ত মামলার চার্জশীট গ্রহনের বিষয়ে শুনানীর দিন ধার্য করা আছে।

এমন ভয়াবহ জাল জালিয়াতির মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আসামি আইনজীবী জিয়া উদ্দিনকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট প্রদানের ঘটনায় তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠেছে। মামলাটির পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আদালতের বিশেষ অনুকম্পা কামনা করেছেন সচেতন মহল।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) (বর্তমানে কুমিল্লা তিতাস থানায় কর্মরত) ওবাইদুল হক। তবে, কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা করা অভিযোগপত্রটি এখনো গৃহীত হয়নি।গত ৪ জানুয়ারি উক্ত প্রতিবেদনের শুনানির দিন ধার্য থাকলেও তা শুনানী না হওয়ায় আগামীকাল ২০ মার্চ শুনানির হবে বলে জানা গেছে। সচেতনমহল এই মামলাটি পুনরায় অন্য একটি সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

আদালতে জমা করা অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, জাল-জালিয়াতির বিষয়ে উক্ত মামলার ৪ নং আসামী এডভোকেট মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন অবগত ছিলেন না। আসামি দেলোয়ার হোসাইন, সহিদুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক মামুন পরস্পর যোগসাজশক্রমে করেছেন। তবে আদালতের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া ৪নং আসামী জিয়াউদ্দিনকে ১ নং আসামি দেলোয়ার হোসাইন অভিযুক্ত করে আদালতে লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এবং মোজাম্মেল হক মামুনের কোন সম্পৃক্ততা নেই মর্মে আদালতের কাছে লিখিত জবাব দিয়েছেন। উক্ত বিষয়ে মোজাম্মেল হক মামুনের কোন সম্পৃক্ততা না থাকা স্বত্বেও কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা ওই অভিযোগপত্র থেকে মোজাম্মেল হক মামুন সহ অপর ২ আাসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন। অথচ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে সু নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও তাকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করায় এতে মোটা অংকের লেনদেন হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

গত বছরের ৩ মে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং ৫ এর বেঞ্জ সহকারী মোহাম্মদ শফি সদর থানায় মামলাটি করেন। যার নং-৬/২৩৪।

কক্সবাজার বন মামলা নং-১৩০/২০২০ (সদর) এর বিগত ০২/০৫/২০২৩ এর আদেশের অনুবলে দায়েরকৃত এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, সরকারি রক্ষিত বনে অবৈধভাবে প্রবেশ করে পাহাড়ের মাটি কেটে পাচার, ভূমিরূপ বৈচিত্র্য পরিবর্তন, বন ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনের অপরাধে ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর সহিদুল ইসলাম ও নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যা বর্তমানে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-৫ এ বিচারাধীন রয়েছে।

বালি পরিবহনের সময় জব্দকৃত ডাম্প ট্রাক (যার নং-চট্টমেট্রো-ড-১১-০০৪৭) এর মালিক দেলোয়ার হোসাইন জিম্মা প্রার্থী হিসেবে গাডির জিম্মা প্রার্থনা করলে জেলা ও দায়রা জজ আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত ৫ লক্ষ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি সাপেক্ষে গাড়িটি জিম্মা প্রদানের আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

পরবর্তীতে জিম্মা প্রার্থী দেলোয়ার হোসাইনের যোগসাজশে এডভোকেট জিয়াউদ্দিন স্বাক্ষরিত আবেদনের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের অনুবলে ডাম্পার গাড়ির জিম্মা নামা সম্পাদনের আবেদন করেন।

জিম্মা প্রার্থীর পক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি দাখিল করায় গাড়িটি শর্তসাপেক্ষে জিম্মা প্রদানের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত জিম্মা প্রার্থী দেলোয়ার হোসাইনের ব্যাংক হিসেবে প্রত্যয়ন উল্লেখিত ৫ লক্ষ টাকা স্থিত রাখতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড লিংক রোড শাখার ম্যানেজারকে নির্দেশ প্রদান করেন।

আদালতের আদেশের জবাবে শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হামিদ উল্লাহ জানান, দেলোয়ার হোসাইনের সঞ্চয়ী হিসাব নং-২০৫০৪১৯০২০০০৭৪৫১৮ এর অনুকূলে কোন প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হয় নি। সংযুক্ত প্রত্যয়নপত্রে যে প্যাড, সীল, স্বাক্ষর, নাম ও পদবী ব্যবহার করা হয়েছে তা তাদের ব্যাংক বা শাখার নয়।

মূলত আদালতকে প্রভাবিত করতে আসামিরা জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন, এমনটি জানান মামলার বাদি মোহাম্মদ শফি।

এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক মামুন জানান, তদন্ত কর্মকর্তা মনগড়া তদন্ত করে তাঁকে মামলায় অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়ে চলে গেছেন। মামলার প্রধান আাসামীর লিখিত জবাব অনুসরণ করেনি তদন্ত কর্মকর্তা এবং তার জবাবটির কথাও চার্জশিটে উল্লেখ করেননি। প্রকৃত পক্ষে মামুন নির্দোষ। এবিষয়ে তিনি প্রতিকারের জন্য উচ্চাদালতের আশ্রয় গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগপত্র প্রসঙ্গে জানতে তদন্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হককে ফোন করা হয়। মুঠোফোনে জবাবে বলেন, তিনি যা বলার তা আদালতে বলবেন।