রেলে কক্সবাজারের স্বপ্ন আরো কাছে

বিশেষ প্রতিবেদক :

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার নির্মাণাধীন রেলপথে ৯টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে অধিকাংশেরই কাজ শেষের পথে।

শুধুমাত্র লোহাগাড়া স্টেশন বিল্ডিংয়ের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। অন্য আট স্টেশনের বিল্ডিংয়ের ছাদের কাজও শেষ হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে।

এরই মাধ্যমে রেলে চড়ে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্ন আরো কাছে চলে আসছে। এদিকে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মূল কাজও ৬৬ শতাংশ শেষ হয়েছে।

আগামী মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়েলগেজ রেল লাইন প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে (১শ’ কিলোমিটারের মধ্যে) মোট ৯টি স্টেশন বিল্ডিং থাকছে। স্টেশন বিল্ডিংগুলো হলো- দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ (ঈদগাঁও), রামু ও কক্সবাজার।

সহকারী প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী আজাদীকে জানান, কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পে ৯টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে লোহাগাড়া ছাড়া অন্য ৮টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। এরমধ্যে দোহাজারী স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে। দোহাজারী এবং চকরিয়ায় সিনিয়র উপ সহকারী ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি থাকবে। প্রতিটি স্টেশনে তিনজন স্টেশন মাস্টারের বাড়ি থাকবে।

চকরিয়া-হারবাং স্টেশনের ছাদও হয়ে গেছে। কক্সবাজার স্টেশনের কাজ চলছে পুরোদমে। দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশনের অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কক্সবাজার স্টেশনে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৭টি বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। সবগুলো স্টেশনের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে। এখন মূল প্রকল্পের ৬৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হবে বলে জানান প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী।

এই প্রকল্পে কাজ করছে চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি)। এছাড়া বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এ প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত।

প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার। এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে চারটি বড় সেতুসহ ২৫টি সেতু। চারটি বড় সেতুর কাজ প্রায় শেষের দিকে। বড় সেতুগুলো তৈরি হচ্ছে মাতামুহুরী নদী ও শাখা নদী, শক্সখ এবং বাঁকখালী নদীর ওপর।

১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলে কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। পর্যটনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে কক্সবাজার অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পে চারটি বড়, ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট, ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। রেললাইনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন রেললাইনে অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইভারের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থা সংযোজন এবং কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হচ্ছে সর্বাধুনিক আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনাঞ্চলের ভেতরে হাতি চলাচলের জন্য দুটি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সবগুলোর সেতুর স্প্যান ও পিলারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কক্সবাজার অংশের ২০টি সেতুতে গার্ডার বসানো প্রায় শেষের পথে। দোহাজারী অংশের ১৮টি সেতুর স্প্যান ও পিলার নির্মাণ শেষে ১২ এপ্রিল থেকে গার্ডার বসানো শুরু হয়েছে।