রোজার প্রাথমিক যে বিষয়গুলো জানা জরুরি

চলে এলো রমজান মাস। করোনার প্রাদুর্ভাবের এ সময়েও নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানের ইবাদত-বন্দেগি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে মানুষ। মাসজুড়ে উপবাস করাই রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

দীর্ঘ ৩০ দিন রোজা পালন করবে মুমিন মুসলমান। এ সময় তারা সুবহে সাদেক থেকে শুরু করে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সব ধরনের খাদ্য-পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। কারণ রোজা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। রোজার কিছু প্রাথমিক জিজ্ঞাসা তুলে ধরা হলো-

>> সাওম বা রোজা
সাওম বা সিয়াম আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা। ইসলামের রোজার বিধান হলো- সুবহে সাদেক থেকে শুরু করে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত দিনের বেলায় যে কোনো ধরনের পানাহার ও স্ত্রী মেলামেশা থেকে বিরত থাকা। এবং রোজা ভেঙ্গে যায় এমন কাজ থেকে বিরত থাকা।

>> ইসলামের রোজার তাৎপর্য
ইসলামে রোজা গুরুত্ব অনেক বেশি। এটি ইসলামের ৫টি স্তম্ভের অন্যতম একটি। এটি ধনী-গরিব সবার জন্য ফরজ। এ রোজা মানুষের জন্য জাহান্নামের ঢাল। হাদিসে এসেছে-

– হজরত ওসমান ইবনে আল-আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। রোজা জাহান্নামের আগুণ থেকে মুক্তির জন্য ঢাল স্বরূপ।’ (নাসাঈ)

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহর পুরষ্কারের আশায় রমজান মাসের রোজা পালন করেন আল্লাহ তাআলা তার বিগত জীবনের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

– হজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে একদিনের জন্য রোজা রাখে আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

>> যারা রোজা রাখবে
রমজানের রোজা প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ-নারীর ওপর বাধ্যতামূলক। যাদের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পরবে তাদের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। আর তাহলো-
– জ্ঞানবান হওয়া। অর্থাৎ পবিত্রতা অর্জন ও রোজা রাখায় সক্ষম হওয়া।
– প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
– স্থায়ী হলে অর্থাৎ সফর অবস্থায় না থাকলে।
– নারীদের জন্য হায়েজ (মাসিক) নেফাস (সন্তান জন্মদনের পরের রক্তক্ষরণ থেকে) মুক্ত হওয়া।

>> রমজান থেকে যারা অব্যহতি পাবে
যাদের জন্য রোজা রাখার প্রয়োজন নেই। আবার অনেকের জন্য এ রোজা পরবর্তী সময়ে পূর্ণ করতে হবে। আর তাহলো-
– পাগল, উম্মাদ তথা মস্তিষ্ক বিকৃতির লোক।
– পবিত্রতা ও রোজার জ্ঞানহীন শিশু।
– প্রবীণ ও বয়স্ক সেসব ব্যক্তি যাদের জন্য রোজা রাখা অসম্ভব। তারা তাদের রোজার পরিবর্তে একজন গরিবকে খাবার খাওয়াবে।
– গর্ভবতী মা অথবা সন্তান জন্মদানকারী মাদের জন্য। যারা রোজা রাখলে সন্তানের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এসব নারীদের রোজার ক্ষেত্রে কোনো কোনো আলেম একজন গরিবকে খাওয়ানোর কথা বলেছেন। আবার অনেক আলেম এদেরকে পরবর্তীতে রোজা রাখার কথা বলেছেন।
– হায়েজ ও নেফাসের আন্তর্ভূক্ত নারীর রোজা। তারা হায়েজ ও নেফাসের পর রোজা পূর্ণ করবেন।

>> রোজাদারের জন্য নসিহত
– রাতের শেষ ভাগে (ভোর হওয়ার আগে) রোজার নিয়তে সাহরি খাওয়া। সাহরির পর এভাবে রোজার নিয়ত করা-

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

– সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা।
– ইফতারের সময় বিশ্বনবির এ দোয়াটি পড়া-
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ

উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’

অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)
– রোজা নষ্ট হয়ে যাবে এমন সব কাজ পরিহার করা।
– রোজা অবস্থায় যথাসম্ভব নেক কাজে অতিবাহিত করা।

>> যে কাজে রোজা ভেঙে যায়

– কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা।
– ইচ্ছাকৃত বমি করা। (তবে কেউ কেউ এটিকে রোজা ভাঙার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন না।)
– নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে।
– যে কোনো ধরনের যৌন কাজ করা। আর তাতে বীর্জপাত হলে রোজা ভেঙে যাবে।

>> যেসব কাজে রোজা ভাঙবে না-
– গোসল করা।
– কুলি করা।
– নিজেকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম ব্যক্তির স্ত্রীকে আসক্তিহীনভাবে চুম্বান করা বা জড়িয়ে ধরা।
– পানি দিয়ে নাক-মুখ ধোয়া।
– মুখের লালা খাওয়া।
– (রান্নার কাজে জড়িত লোকের|) খাবার না খেয়ে স্বাদ চেখে দেখা।
– (প্রয়োজনে) ইনজেকশন নেয়া।
– ফুল বা সুগন্ধি ব্যবহার করা।
– স্বপ্নদোষ হওয়া।
– ভুলে কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা।
– অবিচ্ছিন্নভাবে অল্প বমি করা।
রমজানের বেশি দিন বাকি নেই। রমজানের প্রস্তুতিতে এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা খুবই জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনার প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে যথাযথভাবে রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।