রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে কড়া নিরাপত্তা

বার্তা ২৪ ◑

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। খুন-ধর্ষণ থেকে শুরু করে চুরি-ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ মাদক ব্যবসায় জড়াচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতা ঠেকানো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪০ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত দুই বছরে ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭১টি। এর মধ্যে মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৩ ও নারী সংক্রান্ত মামলা ৩১টি। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৮৮ রোহিঙ্গা।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসনের পক্ষে ও বিপক্ষে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। ‘হিট পয়েন্ট গ্রুপ’ ও ‘আল-ইয়াকিন’সহ কয়েকটি রোহিঙ্গা গোষ্ঠী অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

সবশেষ সোমবার (২ মার্চ) কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাব ও বিজিবির সঙ্গে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৮ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন ও বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হন। নিহতরা কুখ্যাত রোহিঙ্গা ডাকাত জকি গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এমনকি নিহত সাতজনের মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে র‌্যাব ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ফের গুলিবর্ষণ করেন ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা।

কর্মহীন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে দিনে দিনে বাড়ছে নানারকম অপরাধ প্রবণতা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন।

সবকিছু বিবেচনা করে, দীর্ঘ সময়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় ক্যাম্পগুলোর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১৬তম ইউনিটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নবগঠিত এ ইউনিটের জন্য সৃজন করা হয়েছে ৫৮৮টি পদ। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।

নবগঠিত গঠিত ১৬ এপিবিএন ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে থাকবেন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠাকালেই দায়িত্ব সামলাবেন এসপি হেমায়েতুল ইসলাম। সেই সঙ্গে দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, চারজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), নয়জন পরিদর্শক, ৩১ জন উপ-পরিদর্শক, ৪৫০ কনেস্টবলসহ প্রায় ৫৮৮টি পদ থাকছে নতুন এ ব্যাটালিয়নে।

বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১৬তম ইউনিটের অনুমোদন দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের অপরাধ কার্যক্রম ঠেকাতে এবং নিরাপত্তার জন্য মাঠপর্যায় থেকে ক্যাম্প এলাকায় অন্তত তিনটি থানা এবং একাধিক পুলিশ তদন্তকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মো. সোহেল রানা বলেন, পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ১৬ এপিবিএন প্রধানত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং রোহিঙ্গাদের চলাচল কেবলমাত্র ক্যাম্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে কাজ করবে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ইউনিটটি গঠিত হওয়ার পরই অর্পিত দায়িত্ব পালনে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করেছে।