১৯১ উন্নয়ন প্রকল্পে কক্সবাজারে ‘দিন বদলানোর তাড়া’

বুলবুল রেজা •

মাত্র পাঁচ বছরেই বদলে যাবে দেশের একটি জেলার পুরো চিত্র। হাইটেক সিটি ও মাল্টিমোডাল হাব হতে চলা সেই জনপদ কক্সবাজার। ছোট-বড় ১৯১টি উন্নয়ন প্রকল্পে এখন ‘দিন বদলানোর তাড়া’ যেন সেখানকার সর্বত্র।

রেলসংযোগ, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং আধুনিক পর্যটনব্যবস্থা। সবমিলিয়ে এক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে কক্সবাজার ঘিরে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি কক্সবাজার। সমুদ্রের বালুকাময় তীর, পাহাড় আর ঝরনায় প্রকৃতি যেন এখানে সেজে বসে থাকে, তার রূপ আস্বাদনে পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানাতে। যেখানে সবুজের ছায়াঘেরা নয়নাভিরাম মেরিন ড্রাইভ দূর দিগন্তে মিলতে চায় পথিককে নিয়ে।

কক্সবাজারের চিরচেনা এই রূপের অধ্যায়ে যেন নতুন সংযোজন হতে যাচ্ছে সরকারের বেশ কয়েকটি প্রকল্প। বিদ্যমান বিমানবন্দরটিকে আধুনিক করে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যেখানে ১০ হাজার ৭০০ ফুট দীর্ঘ রানওয়ের, ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে বঙ্গোপসাগরে। স্যান্ড পাইলিং করে তৈরি করা এই রানওয়ে হবে দেশের সর্ববৃহৎ।

সুপরিসর রানওয়েতে হরহামেশাই বোয়িং ৭৭৭ এবং ৭৪৭ এর মতো বড় বিমানে একসঙ্গে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবেন সহস্রাধিক যাত্রী। অবতরণের সময় ভ্রমণকারীরা পাবেন সমুদ্রের জলছোঁয়ার এক ঝুলন্ত অনুভূতি। পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানের সুবাদে ইন্টারন্যাশনাল রি-ফুয়েলিং পয়েন্ট ও ভিআইপি আকাশযানের পার্কিং থেকেও বড় আয়ের উৎস হবে কক্সবাজার এয়ারপোর্ট।

আকাশপথের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো এই জেলায় রেলসংযোগ দেওয়ার কাজও চলছে জোরেশোরেই। দৃশ্যমান এই লাইনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের বুক চিরে একেবারে সোজা মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত যাবে রেলের গাড়ি। ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে ঝিনুকের আদলে আইকনিক রেলস্টেশন ভবন। যাতে করে আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যাত্রার পাশাপাশি এখানকার মাছ, লবণ ও কৃষিজ পণ্য সহজেই পরিবহন করা যায় সর্বত্র। ২০২৩ সালে চালু হলে আন্তর্জাতিক করিডোরে পরিণত হবে নতুন এই রুটটি।

পরিকল্পিত পর্যটনের জন্য গোছানো হচ্ছে সাবরাং ইউনিয়নকে। নীল জলরাশির এই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করেই পাহাড় ও সাগরে বৈচিত্র্যময় দৃশ্য। সেখানে থাকবে ইকো-ট্যুরিজম, মেরিন অ্যাকুরিয়ামসহ বিদেশি পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা।

শুধু পর্যটন নয়, এই জনপদ অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটাতে শিল্প খাতেও সেজে উঠছে আধুনিক অবকাঠামোর মাধ্যমে। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। থাকবে এলএনজি টার্মিনালও।

এ ছাড়া কক্সবাজারের মাটিতেই গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর, যা অর্থনৈতিক সক্ষমতায় নতুন দুয়ার হবে দেশের জন্য।

পাশাপাশি, গভীর সমুদ্রে জ্বালানি তেল খালাসে সিঙ্গেল পয়েন্ট ম্যুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন প্রকল্পটিও বাস্তবায়িত হচ্ছে কক্সবাজারেই। এটির জন্য পাহাড়ি ভূমিতে স্থাপন করা দৈত্যাকৃতির স্টোরেজ ট্যাংকগুলো যেন তেল মজুতের নতুন আঁধার হতে চলেছে।

কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে নেওয়া এমন ১৯১টি প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। একক জেলা বিবেচনায় যা বিনিয়োগের অঙ্কে সবচেয়ে বেশি।

এসব বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাঁচ বছর পর যেন দেশের জন্য বিরল সুযোগ আর সম্ভাবনার পদধ্বনি শোনাচ্ছে কূলে আছড়ে পড়া এই ঢেউ।