কতটুকু সম্ভাবনাময়?

৩৭ বছর পর দেশে তেলের সন্ধান

জার্নাল ডেস্ক •

বাংলাদেশে ৩৭ বছর পর আবারও ভূগর্ভে তেলের সন্ধান মিলেছে। সিলেটে একটি গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের সময় সেখান তেল পাওয়া যায়। গতকাল রোববার দুপুরে নিজ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে খবরটি জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। সিলেটের জৈন্তাপুর–গোয়াইনহাট এলাকায় ১০ নম্বর কূপের প্রথম স্তরেই তেলের সন্ধান পাওয়ার কথা জানান তিনি। এছাড়া চারটি স্তরে গ্যাস পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলে দুই মাস আগে ড্রিল শুরু হয়। ২,৫৭৬ মিটার খনন সম্পন্ন হয়েছে এখানে। এর চারটি স্তরে আমরা গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছি। একদম নিচে গ্যাসের প্রবাহ ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত আর প্রেশার ৩২৫০ পিএসআই। এখানে গ্যাসের মজুদের পরিমাণ ৪৩ দশমিক ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট। খবর বিবিসি বাংলার।

প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৩৯৭ থেকে ১৪৪৫ মিটার গভীরে যে জোন সেখানে ৮ ডিসেম্বর তেলের উপস্থিতি মিলেছে। এখন প্রতি ঘণ্টায় যে প্রেশার তাতে ৩৫ ব্যারেল তেল উঠছে। প্রথম দিন দুই ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল উঠেছে। এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ঠিক কত বড় এই খনি এবং কী পরিমাণ তেল এখান থেকে পাওয়া যেতে পারে তা নিশ্চিত হতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে বলে জানান তিনি। আরও বিস্তারিত পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য তেল পাঠানো হয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, বুয়েট ও সিলেট গ্যাসফিল্ডে।

তেলের মজুদ সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা দেন নসরুল হামিদ। তিনি আশা করেন, যদি ২৫৪০ ও ২৪৬০ মিটার গভীরে একযোগে উৎপাদন করা হয় তাহলে এটি আট থেকে ১০ বছর স্থায়ী হবে। আর ২০ মিলিয়ন ঘনফুটে তেল উৎপাদন করা হলে তা ১৫ বছরের বেশি টিকে থাকবে। আর এর গড় মূল্য ৮৫০০ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে এখনই এ থেকে ব্যাপক পরিমাণ তেল আসবে–এমন উচ্চাভিলাষের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, সিলেটের ঐ অঞ্চলে এর আগেও তেলের সন্ধান মিলেছে। কিন্তু এই অঞ্চলে ছোট ছোট স্তরগুলোর বিস্তৃতি খুব বেশি হয় না। তিনি এটাকে আপাতত আরেকটা ছোট স্তর বলেই ভাবতে চান।

বাংলাদেশে সবশেষ ১৯৮৬ সালে হরিপুরে তেলের সন্ধান মিলেছিল। সেখান থেকে পাঁচ বছর তেল উত্তোলন করা হয়। এরপর প্রায়শই ছোট–বড় গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মিললেও বাংলাদেশে তেলের অস্তিত্ব সহসা পাওয়া যায়নি।

এ কারণেই এটাকে আশাব্যঞ্জক বলছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা গ্যাসের দেখা পাই, কিন্তু তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। এখন এই তেলক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া আমাদের উৎসাহ দিচ্ছে যে, এখানে তেল আছে। তার মানে ভবিষ্যতে আরও পাওয়া যাবে। তবে আগের তেলক্ষেত্রের থেকে এটির স্তর আলাদা। দুইটার মধ্যে যদি সংযোগ থাকত তাহলে এটি বড় আকারে বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ রকম আরও তেলের স্তর পাওয়া যেতে পারে। কারণ ভূতাত্ত্বিকভাবেই সিলেট অঞ্চলে গ্যাস ও তেলের সন্ধান মেলে বেশি। আমরা গ্যাস বেশি পাই, কিন্তু তেল কম পেলেও এখানে কিন্তু ভূগর্ভের বিভিন্ন জায়গায় কম হলেও তেল জমা হয়ে আছে। তাই এ রকম সামনে আরও পাব। কিন্তু এটা যেন অতি আশাবাদী না করে বা সরকারের তরফ থেকে যেন খুব বড় করে দেখানো না হয়। এক্ষেত্রে তিনি পদ্ধতিগত উত্তোলনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন।

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, হরিপুরে যেটা পাওয়া গিয়েছিল সেখানে কিন্তু নিয়ম মেনে তেল তোলা হয়নি। শুধুমাত্র যতদিন প্রাকৃতিকভাবে উঠে আসছে ততদিন তোলা হয়েছে। কিন্তু তারপর তেলক্ষেত্র ডেভেলপ করা হয়নি।

তিনি বলেন, যখন চাপ কমে তখন তেল আর প্রাকৃতিকভাবে উঠে আসে না। নিচে থেকে যাওয়া তেল তুলতে নানা পদ্ধতি মানতে হয়। প্রাকৃতিকভাবে তেল ওঠা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা মনে করি শেষ হয়ে গেছে। তেল কিন্তু মাইগ্রেশন করে। সরে গিয়ে একটা যুৎসই জায়গায় রিজার্ভ হয়। তখন ভিন্নভাবে ইন্ডাকশন অয়েল দিয়ে তেল উত্তোলন করতে হয়। আমাদের সে রকম পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন ও প্রোডাকশন কোম্পানি বাপেক্স এটা করতে সক্ষম বলে মনে করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এই তেল পাওয়াটাকে সুখবর উল্লেখ করে বলেন, আগে গ্যাসের সাথে একটু করে একসাথে তেল আসত। কিন্তু এবারা আলাদা আলাদা স্লটে আমরা তেল–গ্যাস পাচ্ছি।

বাংলাদেশে বছরে চাহিদা ৬ মিলিয়ন তেলের। আমদানি করেই এই চাহিদা মেটাতে হয় সরকারকে। তবে নসরুল হামিদ বলেন ২০২৭ সাল নাগাদ গ্যাসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশের।