এনজিও কর্মীর ছদ্মবেশে রোহিঙ্গা শিবিরে শতাধিক জঙ্গী; গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির দাবি!

এনজিও কর্মীর ছদ্মাবরণে রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন এনজিওতে চাকরি করছে শতাধিক জঙ্গী। জঙ্গীপনা-প্রশিক্ষণ ও নাশকতার ছক তৈরিকল্পে কেউ কেউ ঠিকাদারির ভান করে উন্নয়ন কাজ চালাচ্ছে আশ্রয় ক্যাম্পে।

তারা রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত উগ্রপন্থী রোহিঙ্গা সংগঠনের ক্যাডারদের সঙ্গে হরদম যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। বুধবার পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এর অভিযানে জঙ্গী সংগঠন হিজবুত তাহ্রীরের নেতা এইচএম মেহেদি হাসান রানা গ্রেফতার হওয়ার পর গোপন তথ্য বেরিয়ে আসছে।

সূত্র জানায়, হিজবুত তাহ্রীর, আলইয়াকিন, আরএসও, আল-কায়েদাপন্থী জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলাম, আল-মাহাদ আল ইসলামী (ইসলামী মাহায), জমিয়া আহলে সুন্নাহ, ইত্তেহাদুল মুনাজ্জামাত (জমিয়তুল মুনাজ্জামাত) এবং হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বুরমার ক্যাডাররা ছদ্মবেশে ঘাপটি মেরে আছে রোহিঙ্গা শিবিরে। অভিযোগ রয়েছে, জুনায়েদ বাবুনগরী পন্থী সদ্য বিলুপ্ত হওয়া হেফাজত গ্রুপের সমর্থক ও বেশ কয়েকজন উগ্রপন্থী পুরনো রোহিঙ্গা নেতাও রয়েছে আশ্রয় ক্যাম্প ও দেশের বিভিন্ন স্থানে। মূলত বাংলাদেশী দাবিদার রোহিঙ্গা জঙ্গী নেতাদের পরামর্শক্রমে নাশকতার ছক তৈরি করে থাকে আশ্রয় শিবিরে।

গত ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালী ৮ ও ৯নং ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নাশকতার ছক তৈরি মতে কাজ বাস্তবায়ন করেছে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা। যদিও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে পরিকল্পনা মতে জঙ্গীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘন ঘন আগুন দিয়ে ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে দেশে।

জানা গেছে, সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে ঠিকাদারের বাহনায় ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে বিপদগামী রোহিঙ্গাদের একাট্টা করার চেষ্টা চালাচ্ছে ঈসা সাইদী নামের এক রোহিঙ্গা জঙ্গী। গোপন বৈঠক করতে দুবাই যাবার সময় চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে গ্রেফতার হন এই জঙ্গী নেতা। জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি একজন আইনজীবী তাকে জিম্মায় নিয়ে জামিনে মুক্ত করেন। ঈসা সাঈদী আল-মাহাদ এর আন্তর্জাতিক বিভাগের দায়িত্বে আছেন গত তিনবছর ধরে। দুই বছর যাবত আল-মাহাদ আল ইসলামীর দুবাই ও ওমানের রিজিওনালের দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রামের ডবল মুরিং এলাকা থেকে ভোটার হলেও ঈসা সাইদী এক জায়গায় দীর্ঘদিন বসবাস করে না। রামুর বড় ডেবা, উখিয়ার পাতাবাড়ি ও কুতুপালং বা বালুখালী শিবিরে থাকে। তার পাসপোর্ট নং- বি এল- ০৫০৭১২৯।

ভয়ঙ্কর রোহিঙ্গা জঙ্গী ও চট্টগ্রামের একজন সাংসদের ছত্রছায়ায় থাকা ইদ্রিস জিহাদীর ফয়জিয়া ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করে আসছে। ওই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৬ ক্যাম্পে ঈসা সাঈদী তদারকি করে থাকে। ওই ইদ্রিস জিহাদীর সহোদর আফগানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গী ইউনুস জিহাদীর সহোদর। জঙ্গী প্রশিক্ষণের প্রাক্কালে আফগানিস্তানে নিহত হয়েছেন বাংলাদেশী দাবিদার জঙ্গী ইদ্রিস জিহাদীর সহোদর সেই ইউনুস জিহাদী। এই ইদ্রিস জিহাদী রামু হাইটুপি এলাকায় বিশাল জায়গা কিনে বাড়ি নির্মাণ করেছে। আর দেশে নিষিদ্ধ জিহাদী সংগঠন হিজবুত তাহ্রীরের আইটি বিশেষজ্ঞ ধৃত নেতা এইচএম মেহেদি হাসান রানার বাড়ি পটুয়াখালীর জেলার মীর্জাগঞ্জে হলেও এনজিও ব্র্যাকের কর্মী হিসেবে কক্সবাজার ও ৩২টি ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত। গোপনে প্রশিক্ষণ দিয়ে সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা করেছে বিপদগামী রোহিঙ্গাদের। রাজধানীর ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি পাস করা ধৃত জঙ্গী রানা বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাকে এ্যাসিস্টেন্ট টেকনিক্যাল অফিসারের দায়িত্ব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছদ্মবেসে একটি প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করে আসছিল।

বুধবার রাতে উখিয়ার পালংখালী এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিজবুত তাহ্রীরের আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদি হাসান রানাকে গ্রেফতার করা হয়। আশ্রয় শিবিরে খবর পাওয়া মাত্র দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা অভিযানে নেমে পড়ে সত্যি। তবে রোহিঙ্গা ক্যাডারদের মুঠোফোনে অভিযানের খবর আগাম পৌঁছে যাওয়ায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। তাই প্রতিটি ক্যাম্পে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছেন সচেতনমহল।

সুত্র : দৈনিক জনকন্ঠ।