কক্সবাজারে এসএসসিতে পাসের হার ৮৮.৪৫%, জিপিএ-৫ পেল রেকর্ড ২৪৫১ জন

বিশেষ প্রতিবেদক •

ফাইল ছবি

কমেছে পাসের হার কিন্তু রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে জিপিএ-৫। গেল বছরও (২০২১ সালে) যেখানে পাসের হার ছিল ৯০.৯৪% এ বছর সেখানে ৮৮.৪৫%। গত বছর জিপিএ-৫ ছিল যেখানে ১৫৯৫ জন সেখানে এবছর পেয়েছে রেকর্ড ২৪৫১ জন। পাসের হার সামান্য ২.২২% কমলেও এক লাফে জিপিএ-৫ বেড়েছে  ৮৫৬ জন! এমনই চমকে দেওয়া ফলাফল হয়েছে এবার কক্সবাজার জেলায়। আর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে  কক্সবাজার জেলায় সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছে কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

২৮ নভেম্বর  সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলাতেও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা ২০২২ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এবছর এসএসসিতে কক্সবাজার জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ২২ হাজার ৭১৯ জন। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ২২ হাজার ৪৬৬ জন। আর পাশ করেছে ১৯ হাজার ৮৭২ জন। পাশের হার ৮৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৪৫১ জন।

এবারের পরীক্ষায় ছেলে পরীক্ষার্থী ছিলো ১০ হাজার ৩২৬ জন এবং অংশ নেয় ১০ হাজার ২৮০ জন।এর মধ্যে পাশ করেছে ৯ হাজার ১২০ জন ।পাশের হার ৮৮.৭২%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪২ জন।অন্যদিকে এবারের পরীক্ষায় মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিলো ১২ হাজার ৩৯৩ জন এবং অংশ নেয় ১২ হাজার ১৮৬ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ১০ হাজার ৭৫২ জন এবং পাশের হার ৮৮.২৩%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩৬৯ জন।

অন্যদিকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২হাজার ৪৫১ জন শিক্ষার্থী।এর মধ্যে ছাত্র ১০৮২ জন আর ছাত্রী ১৩৬৯ জন। গত বছরের তুলনায় এবছর ৮৫৬ জন বেশি পেয়েছে।  ২০২১ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৫৯৫ জন শিক্ষার্থী।এর মধ্যে ছাত্র ছিল ৭১২ জন আর ছাত্রী ৮৮৩ জন।

 

বিজ্ঞান বিভাগ

পরিসংখ্যানে দেখা যায়,কক্সবাজার জেলায় প্রতিবারের মতো ২০২২ সালেও পাশের হার সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞান বিভাগে। এবছর বিজ্ঞানে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৪২৪৪ জন এবং অংশগ্রহন করে ৪ হাজার ২৪৫ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৪ হাজার ১৩৬ জন। পাশের হার ৯৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৯৬৬ জন।

এবছর বিজ্ঞানে মোট ছেলে পরীক্ষার্থী ছিলো ২১৮৩ জন এবং অংশগ্রহন করে ২ হাজার ১৭৬ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ২ হাজার ১৩৩ জন।পাশের হার ৯৮.০২% এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩০ জন।অন্যদিকে এ বিভাগে মোট মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিলো ২০৬১ জন এবং অংশগ্রহন করে ২ হাজার ৫০ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ২ হাজার ৩ জন। পাশের হার ৯৭.৭১% । আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩৬ জন।

বাণিজ্য বিভাগ

এবছর বাণিজ্য বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৬৮১৬ জন এবং অংশগ্রহন করে ৬ হাজার ৭৬৬ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৬ হাজার ২৫০ জন। পাশের হার ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫২ জন।

এবছর বাণিজ্যে মোট ছেলে পরীক্ষার্থী ছিলো ৩৯১৬ জন এবং অংশগ্রহন করে ৩ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৩ হাজার ৫৭৬ জন।পাশের হার ৯১.৬৭% এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩০ জন। অন্যদিকে এ বিভাগে মোট মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিলো ২৯০০ জন এবং অংশগ্রহন করে ২ হাজার ৮৬৫ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ২ হাজার ৬৭৪ জন। পাশের হার ৯৩.৩৩% । আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২২ জন।

মানবিক বিভাগ

এবছর মানবিক বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ১১,৬৫৯ জন এবং অংশগ্রহন করে ১১ হাজার ৪৭৪ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৯ হাজার ৪৮৬ জন। পাশের হার ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১৩৩ জন।

এবছর মানবিকে মোট ছেলে পরীক্ষার্থী ছিলো ৪২২৭ জন এবং অংশগ্রহন করে ৪ হাজার ২০৩ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৩ হাজার ৪১১ জন।পাশের হার ৯১.৬৭% এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২২ জন। অন্যদিকে এ বিভাগে মোট মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিলো ৭৪৩২ জন এবং অংশগ্রহন করে ৭ হাজার ২৭১ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৬ হাজার ৭৫ জন। পাশের হার ৮৩.৫৫% । আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১১ জন।

এছাড়া জেলায় বরাবরের মতো এবছরও ভালো ফলাফল অর্জন করেছে কক্সবাজার শহরের দুটি প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন কক্সবাংলাকে জানান,এবছর ২৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তির্ন হয়েছে ২৫৮ জন। ফেল করেছে ১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯০ জন।পাশের হার ৯৯.৬১%। এ স্কুলে বিজ্ঞানে ১১৬ জন ছাত্রের মধ্যে পাশ করেছে ১১৫ জন। পাশের হার ৯৯.৮৫%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮১ জন। আর বাণিজ্যে ৪৩ ছাত্রের মধ্যে পাশ করেছে ৪৩ জনই। পাশের হার ১০০%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ জন।

অপরদিকে কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তির্ন হয়েছে ২৪৪ জন। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞানের ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করলেও ফলাফল বোর্ড থেকে না আসায় যোগাযোগ করা হয়েছে বলে কক্সবাংলাকে জানিয়েছেনে প্রধান শিক্ষিকা মাসুদা মোর্শেদ আইভি। ৯৯.৭০% পাশ হওয়ার পাশাপাশি রেকর্ড ২০১টি জিপিএ-৫ পেয়ে জেলায় শীর্ষে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। এ স্কুলে বিজ্ঞানে ২১৬ জন ছাত্রীর মধ্যে পাশ করেছে ১১৫ জন। পাশের হার ৯৯.৮৫%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০২ জন। আর বাণিজ্যে ২৯ ছাত্রীর মধ্যে পাশ করেছে ২৯ জনই। পাশের হার ১০০%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ জন।

উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি হস্তান্তর করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করা হয়।দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তবে দুপুর ১২টার পর নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান এবং অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশ করা হয়।

২০২২ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসিতে গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ ।

এছাড়া নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ১০। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের গড় হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪৪১ জন ছাত্র এবং ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ জন ছাত্রী।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ, পরবর্তীতে সিলেটসহ দেশের কিছু এলাকায় বন্যার কারণে দুই দফায় পেছানো হয় পরীক্ষা। এসএসসির নির্ধারিত সূচি মার্চ মাস থেকে সাত মাস পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

এ বছর দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মোট ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে অংশগ্রহণ করছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিলে (ভোকেশনাল) পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২।