কক্সবাজারের আলোচিত তিন ভূমিদস্যু ঢাকায় গ্রেফতার

জসিম উদ্দিন •

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল তেতৈয়া রফিকের ঘোনায় বিচারক পরিবার ও বনভূমির জায়গা জোরপূর্বক দখল করে অবৈধ বসতি স্থাপন ও বিচারক পরিবারের উপর হামলা মামলায় তিন আসামি ঢাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছে।

ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) বেলা ১২ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাদের গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- খুরুশকুলের বাদশা মিয়ার ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামাল উদ্দিন (৪০), তার ভাই শেখ কামাল মেম্বার (৩৮) ও মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক (৪১)।

এ খবর নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী বিচারক পরিবারের সদস্য ও হাইকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানী।

এছাড়াও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, নারীনেত্রী নাজনীন সরোয়ার কাবেরী ফেসবুকে এ সংক্রান্ত পোস্ট দিয়ে আলোচ্য তিন ভূমিদস্যুর গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য এডভোকেট বোরহান উদ্দিন রব্বানী বলেন, মামলার পর থেকে আসামিরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। কিছু ভাড়াটে লোক দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মানববন্ধনের নামে আমাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে লাগাতার বিষোদগার ও চরিত্রহনন করে আসছিল।

জানা যায়, এরমাঝেই গ্রেফতার এড়াতে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের পরামর্শে ঢাকায় আত্মগোপনে গিয়ে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন তারা।

এদিকে গ্রেফতার তিন আসামিকে গ্রহণে কক্সবাজার পুলিশ অনিহা প্রকাশ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের বরাতে আইনজীবী বোরহান উদ্দীন বলেন, ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া আসামীদের নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।

তিনি জানান,কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ডিবিকে বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে ঠিক। কিন্তুু গ্রেফতার করার কথা ছিল না।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় তিন আসামী গ্রেফতারের বিষয়টা আমরা এখনো জানি না। আর আমরা কাউকে অ্যাসাইনমেন্ট দি নাই।

গত ২০ এপ্রিল কক্সবাজার মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন তেতৈয়া রফিকের ঘোনার মৃত হাজি আবুল হোছাইনের ছেলে রফিক আহমদ।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন-মৃত ফজল করিমের ছেলে আবু ছৈয়দ প্রকাশ মুন্সি আবু ছৈয়দ (৪৫), জাফর আলমের ছেলে মো. ইলিয়াছ (৩৫), মৃত বেক্কুর ছেলে মো. কাসেম (৩৪), নুরুল ইসলামের ছেলে মনিউল আলম (৩৮), মৃত মোক্তার আহমদের ছেলে শাহিন আলম (৪০), আবদু সালামের ছেলে মিজানুর রহমান (২৯), আবদুল মজিদের ছেলে সেলিম উল্লাহ (৩১) ও জাফর আলমের ছেলে হামিদ হোসেন (৪৩)।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তৈতৈয়া রফিকের ঘোনা এলাকায় চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দীনের পরিবারের দুই একরেরও বেশি কৃষিজমি ও কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অধীনে বরাদ্দকৃত সামাজিক বানায়ন দখল করে ‘মুজিবনগর’ নাম দেওয়া হয়। ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ন’ ব্যানার টাঙিয়ে শতাধিক ঝুপড়ি নির্মাণ করে গ্রেফতার হওয়া তিনজনের নেতৃত্বে একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যু চক্র।

দখলদারিত্ব বজায় রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌরমেয়র মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ব্যানারে লেখা হয়-‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার।

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দখলকৃত জমির মালিক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ব্রিটিশ ভারতের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ফৌজ আর্মির সদস্য মৃত আবুল হোসেন। তিনি খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিন, হাইকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানীসহ পাঁচজন ব্যক্তি এসব কৃষিজমির মালিক। রয়েছে বন বিভাগের সৃজিত সামাজিক বনায়নভুক্ত জমিও।