কক্সবাজারের নতুন বিনোদন স্পর্ট “নিভৃত নিসর্গ” পার্ক দর্শনার্থীতে ভরপুর

মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া :

মানুষ অনেকটা যান্ত্রিক হয়ে গেছে। সময়ের কারণে বিনোদন কি জিনিস তা অনেকটা ভুলতে চলেছে বিনোদিন প্রেমীরা। তাই কোন উপলক্ষ আসলে বিনোদন প্রেমীরা ছুটে চলেন বিভিন্ন দর্শনাীয় স্থানগুলোতে।

কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এবার পবিত্র ঈদুল আজাহাকে ঘিরে নদী ও পাহাড় বেষ্টিত চকরিয়ার ‘নিভৃত নিসর্গ” পার্কে দর্শনার্থীতে সমাগম লক্ষ্যনীয়। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজমান থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সুরাজপুর-মানকিপুর ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীর কুল ঘেষে বেশ কয়েকটি সুউচ্চ পাহাড় ও লেক নিয়ে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর “নিভৃত নিসর্গ” পার্কের উন্নয়ন কাজের উদ্ধোধন করেন তৎকালিন জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন। পরে সাবেক চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামশুল তাবরীজ এই পার্ককে একটি বিনোদন স্পর্টে রুপান্তরিত করেন।

এরপর থেকে এই বিনোদন স্পর্ট “নিভৃত নিসর্গ” পার্কে স্থানীয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসতে থাকে। বর্তমানে এই বিনোদন স্পর্টকে আরও আধুনিক ও দর্শনার্থীদের আগমন বাড়াতে কাজ করছেন বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান।

আরও জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বিনোদন স্পর্ট “নিভৃত নিসর্গ” পার্ককে আধুনিকায়ন করতে এবং দর্শনার্থীরা যাতে সহজে যেতে পারে সেজন্য নতুন করে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। যে সড়ক দিয়ে যেতেই দর্শনার্থীদের মনে অন্যরকম শিহরণ জেগে উঠে।

এছাড়াও “নিভৃত নিসর্গ” এলাকায় দর্শনার্থীরা যাতে ভিন্ন রকমের বিনোদন পায় সেজন্য বেশ কয়েকটি পাহাড়ের মাঝখানে মাটি কেটে লেক সৃষ্টি করা হয়েছে। এই লেকে রাখা হয়েছে ছোট ছোট বোট। কায়াকিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এছাড়া “নিভৃত নিসর্গ” থেকে নৌকায় করে শ্বেত পাথরে যাওয়ার জন্য ৮/১০টি নৌকা রাখা হয়েছে। তাছাড়াও রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে বিনোদন প্রেমীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে “নিভৃত নিসর্গ” পার্ক। শিশু-কিশোর এবং নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন এলাকায় থেকে আসা বিনোদন প্রেমীদের আনাগোনা লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছে। কেউ পুরো পরিবার নিয়ে নৌকায় চড়ে শ্বেত পাথর দেখার জন্য ছুটে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ কায়াকিং করছে।

আবার অনেকে মনের আনন্দে সেলফি ও মোবাইল এবং ক্যামরায় ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় থেকে অনেকে রাত্রিযাপনের জন্য তাবু জলসা করার জন্য প্রস্ততি নিয়ে এসেছেন।

পার্কে আসা দর্শনার্থী ফাহমিদা আক্তার। এখনও শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম শহরে থাকেন। ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে এসেছেন। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে “নিভৃত নিসর্গ” পার্কের নাম শুনে বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সাথে ঘুরেতে এসেছেন।
তিনি বলেন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে এই পার্কের নাম শুনেছি। এই প্রথমবারের মতো নিভৃত নিসর্গ পার্ক ঘুরতে আসলাম। নৌকায় চড়েছে। পাহাড়ের উপরে উঠে ছবি তুলেছি। বেশ ভালো লেগেছে। চকরিয়ায় তেমন কোন বিনোদনের জায়গা ছিলোনা। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ। এই ধরনের একটা বিনোদনের স্পর্ট করার জন্য।

পার্শ্ববর্তী উপজেলা লোহাগাড়া থেকে এসেছেন আতিক হোসাইনসহ তার আর বেশ কয়েকজন বন্ধু। তারা পার্কে বিভিন্ন স্পর্ট ঘুরে দেখেছেন। খুবই ভালো লেগেছে বলেও জানান। তবে তিনি পার্কে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেয়ারও দাবি জানান।

“নিভৃত নিসর্গ” পার্কের নৌকা মাঝি হেলাল উদ্দিন বলেন, গত কয়েক মাস ধরে তেমন দর্শনার্থী ছিলোনা। ঈদকে ঘিরে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে পার্কে। পার্কে আসা দর্শনার্থীরা নৌকায় চড়ে শ্বেত পাথর দেখতে যাচ্ছে। কেউ কেউ মাতামুহুরী নদীর মনোরম দৃশ্য দেখছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে ৮/১০টি নৌকা রয়েছে। “নিভৃত নিসর্গ” এলাকা থেকে শ্বেত পাথর যাওয়া-আসা ৮’শ টাকা করে নেয়া হয়। এছাড়াও কায়াকিং রয়েছে। যা ঘন্টায় ২’শ টাকা করে নেয়।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হচ্ছে “নিভৃত নিসর্গ” পার্কে। পার্কে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রাথমিকভাবে গ্রাম পুলিশরা কাজ করছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ মোতায়েন থাকলে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা আরও সহজ হতো।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন চক্রবর্তী বলেন, চকরিয়া বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পর্ট রয়েছে। এসব স্পর্টগুলোতে যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ট্যুারিষ্ট পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি থানা পুলিশও নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে।