কক্সবাজারে ২২ পয়েন্ট দিয়ে আসছে ইয়াবা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥

দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে সীমান্তসংলগ্ন উপজেলা টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার সদরের কিছু নেতা মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার গাড়িতে মাদকের চালান জব্দের ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় ও কানাঘুষা চলছে এখনও।

টেকনাফ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৪ হাজার ইয়াবাসহ আওয়ামী লীগ নেতার গাড়িচালক ওসমান গনিকে গ্রেফতার করেছিল। সেই সঙ্গে ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহৃত আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুল্লাহর প্রাইভেট কারটিও জব্দ করেছে পুলিশ।

জানা যায়, কক্সবাজারে ইয়াবা কারবার করে ক্ষমতার দোহাই দিয়ে অনেকে গাড়িবাড়িসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। ইয়াবা বিক্রির টাকায় অনেকে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছেন। মাদক কারবার জোরেশোরে চালাতে কেউ কেউ স্থানীয় আওয়ামী লীগের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে দেড় শতাধিক ইয়াবা কারবারি ইতোপূর্বে দুই দফায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। আত্মসমর্পণের আগে তারা কৌশলে সামলে রেখেছেন তাদের মাদক কারবারে কামাইকৃত কোটি কোটি টাকা ও সম্পদ। দুর্নীতি থেকে নিজেদের রক্ষায় অনেকে বিশ্বস্তজনের কাছে হাওলা করে দিয়েছেন হোটেল, গাড়ি ও বাড়ি। বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে ফিরে এসেছেন নিজ নিজ বাড়িঘরে। অনেকদিন জেলের ঘানি টানলেও কেউ কেউ বদলাতে পারেনি তাদের পুরনো অভ্যাস। প্রতিরাতে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে নিয়ে আসছে লাখ লাখ ইয়াবার চালান।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে পড়লে কিছু কিছু চালান জব্দ করা হচ্ছে। টেকনাফে দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে কিছু নেতা সরকারী দায়িত্ব পালনকারী কতিপয় অসৎ কর্মচারীর সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে মাদকের চালান নিয়ে আসছে মিয়ানমার থেকে। জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় এসে মাদক কারবারিরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ইয়াবা কারবার। বিভিন্ন অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে রাজনৈতিক পদ-পদবিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পেতে অঢেল টাকা খরচ করে চলেছে চিহ্নিত মাদক কারবারিরা। ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক পেতে জেলা আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতার কাছে বস্তা ভরে টাকা দিয়েছে তারা।

এদিকে এসব ইয়াবা চালানের মধ্যে কিছু কিছু চালান লুটপাটও হচ্ছে। এক মাসে টেকনাফে লাখ লাখ পিস ইয়াবার চালান ঢুকেছে এবং একাধিক চালান লুট হলেও এ পর্যন্ত প্রকৃত মালিককে চিহ্নিত ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

ফলে ইয়াবা কারবারিদের অপরাধ প্রবণতার দুঃসাহস দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত রমজান মাসে টেকনাফের রঙ্গীখালীতে সরবরাহ করার সময় কোটি টাকার ইয়াবা লুটপাট করেছে অপর একটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট স্থানীয় মুখোশধারী কিছু নেতার আশ্রয়ে ইয়াবার লুটতরাজ কান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ওই ইয়াবা কারবারিদের বেপরোয়া চলাফেরায় স্থানীয় নিরীহ বাসিন্দার জীবনযাত্রা ব্যাহত করে তুলেছে। মাদক কারবারকে চাঙ্গা করতে সম্প্রতি ছাত্রদল থেকে টাকার জোরে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছে ইয়াবা পরিবারের কতিপয় সদস্য।

সূত্র জানায়, রঙ্গীখালী লামাপাড়ার সাদ্দাম হোছাইন, রফিকুল ইসলাম ও মুফিদুল ইসলামের ইয়াবা কারবার যেন থেমে নেই। ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা এসব কাজ চালাচ্ছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। একশ্রেণীর দলীয় নেতা নিজে ধোয়া তুলসী পাতা সাজতে নিজস্ব লোকজন দিয়ে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে চালান ধরা পড়লেও যেন অনায়াসে পার পেয়ে যেতে পারে।

রবিবার কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে ১৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের এক আওয়ামী লীগ নেতার ড্রাইভারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহৃত ওই নেতার প্রাইভেটকারটিও জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ১শ’ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (মাদক) ও ১৪ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

ধৃত যুবক টেকনাফ সদরের মধ্যম গোদারবিল গ্রামের রফিকের পুত্র ওসমান গনি। জব্দকৃত প্রাইভেটকারটি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুল্লাহর ব্যক্তিগত।

তবে তিনি জানান, গাড়িটি মাঝেমধ্যে ভাড়ায় দেয়া হয়। ধৃত চালক তাকে ভাড়ার কথা বলে গাড়িটি নিয়ে গেছে। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে একটি প্রাইভেট কারে (চট্ট-মেট্রা-গ ১২-২৪১০) মাদকের চালান সরবরাহ হচ্ছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ১৪ হাজার ইয়াবা এবং একটি প্রাইভেটকারসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়।

টেকনাফের হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, লম্বাবিল, খারাংখালী, মিনা বাজার, নোয়াপাড়া, মৌলবিবাজার, ঝিম্মংখালী, হ্নীলা চৌধুরীপাড়া, লেদা, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, সাবরাং নয়াপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়া। উখিয়ার রহমতের বিল, ধামনখালী, বালুখালী, ঘুমধুমের নয়াপাড়া, জলপাইতলী, তেতুলগাছতলা, তুমব্রু পশ্চিমকুল, কোনারপাড়া, চাকমাপাড়া ও রেজু আমতলী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দেশে ঢুকানো হচ্ছে ইয়াবার চালান।