কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে মা-মেয়েকে আটকিয়ে রেখে নির্যাতন, ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি

জসীম উদ্দীন :
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবাপ্রার্থী মা-মেয়েকে আলাদা কক্ষে আটকিয়ে রেখে নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি, চুল ধরে টানাহেঁচড়া, অকথ্য ভাষায় গালমন্দ, দুই আঙ্গুল দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলার হুমকি এবং পাসপোর্ট পেতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে।
খোদ সহকারি পরিচালক আবু নাঈম মাসুম এমন ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগী সাবেকুন নাহার ও তার মেয়ে জোসনা আক্তার। এই ঘটনায় ২৮ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
গত ২৬ জুন কক্সবাজার অাঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসের দু’তলায় আলাদা দু’টি কক্ষে মা-মেয়েকে আটকে রাখা হয়।

তারা কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের আউলিয়াবাদের বাসিন্দা।

ভুক্তভোগী সাবেকুন্নাহার সৌদিআরব প্রবাসি নুরুল ইসলামের স্ত্রী, ঈদগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের ভাতিজি এবং ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুহেনা বিশাদের চাচাতো বোন।

সেবাপ্রার্থী জোসনা আক্তার জানান, দালাল ছাড়া পাসপোর্ট বানালে খরচ কম। তাই প্রবাসি পিতার কথামত তার মাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পাসপোর্ট করতে যান। পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে (ব্যাংক রশিদের রেফারেন্স নং 313415A2002776) যথাযথ প্রক্রিয়ায় অাবেদন ফরমও জমা দেন।

আবেদন ফরম গ্রহণের পর ফিঙ্গার দিতে গেলে সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম মা-মেয়েকে ‘বার্মাইয়া’ বলে অশালীন ভাষায় গালিগাজ করেন। সবার সামনে অাবেদন ফরম ছিঁড়ে ফেলেন।

পরে দু’তলায় নিয়ে মা মেয়েকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকিয়ে রাখেন। পাসপোর্ট পেতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।

জোসনা আক্তারের সৎ মা সাবেকুন নাহার জানান, জোসনার জন্মদাতা মা মারা গেছে। তাই আইডি কার্ডে মায়ের নাম ভিন্ন। এটিকে পুঁজি করে সহকারি পরিচালক প্রথমে তাকে রোহিঙ্গা ও নকল মা প্রমাণের চেষ্টা করেন। এরপর পাসপোর্ট পেতে হলে ৫০ হাজার টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেন। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার মাথার চুল ও দুই আঙুল দিয়ে দু’চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এ সময় কক্ষের ভিতর এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে জানান সাবেকুন্নাহার।

তিনি আরো জানান, পাসপোর্ট অফিসার তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও কান ধরে উঠবস করান। যা এক প্রকার যৌন নির্যাতনের সামিল।
ভুক্তভোগী সাবেকুন্নাহারের দাবী, তিনি বা তার মেয়ে রোহিঙ্গা হলে, বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে- তারাই ব্যবস্থা নেবে। তার যুবতী মেয়েকেসহ টানা ৫ ঘন্টা একা কক্ষে আটকে রাখার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? তিনি এর সঠিক প্রতিকার চান। বিচার না পেলে আত্মহত্যার হুমকি দেন ওই নারী।
পাসপোর্ট অফিসার অাবু নাঈম মাসুমের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ আগেও হয়েছিলো বলে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে।
পাসপোর্ট অফিসারের নানামুখী হয়রানির বিষয়ে রামুর এক নারী লিখিত অভিযোগ করেন। শুনানির ধার্য তারিখে পাসপোর্ট অফিসার উপস্থিত হননি।

একইভাবে অভিযোগ করেন কক্সবাজার আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোঃ আব্দুল মন্নান। তিনি মেয়ের পাসপোর্ট নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

সহকারী পরিচালকের কাছে সঠিক নিয়মে, সঠিক সময়ে আবেদন করেও প্রতিকার পাননি। খোঁজখবর নিলে এরকম হাজারো অভিযোগ মিলবে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক অাবু নাঈম মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2305799539673685&id=2069091666677808