পেকুয়ায় হত্যা মামলায় বাদীর অজান্তে ৮ আসামি!

পেকুয়া প্রতিনিধি :

ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন তাঁরা। বাদীও চিনেন না তাঁদের। যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে তাঁদের বাড়ি সেখানেও না। তবু হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন তাঁরা আটজন। এমন একটি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে কক্সবাজারের পেকুয়া থানায়।

মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নের হরিনাফাঁড়ি এলাকায় ৪নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকের হোসেন ওরফে মিয়াকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।

৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাকের হোসেন। এ ঘটনায় জাকেরের স্ত্রী নাহারু বেগম পেকুয়া থানায় মামলা করেন।

মামলায় ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন সদর ইউনিয়নের হরিনাফাঁড়ি এলাকার শকির আলমের ছেলে আব্দুল জলিল (৪০), জলিলের ছেলে মো. মনির (২২), আব্দুল জব্বারের ছেলে সরফরাজ ওরফে মানিক (২৩), মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মিরাজ উদ্দিন (২৫), জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. মানিক (২৪), আহমদ ছবির ছেলে মোহাম্মদ তারেক (২০), আবদুল জব্বারের ছেলে ইকবাল হোসেন (৩২), পেকুয়া সদরের সিকদার পাড়া এলাকার সাহাব উদ্দিনের ছেলে মো. সাঈদী (২৫), গোলাম রহমানের ছেলে নাঈমুর রহমান (২৪), পূর্ব গোঁয়াখালী এলাকার মৃত এমদাদ মিয়ার ছেলে ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সাজ্জাদ হোসেন (৩৯), আব্বাস উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ (৩১), চট্টগ্রামের বাঁশখালী ছনুয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সুলতান আহমদের ছেলে আবুল বশর (৪৮), পশ্চিম বাইম্যাখালী এলাকায় আহমদ কবিরের ছেলে মো. বাচ্চু (৩০), সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাহ ঘোনা এলাকার মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে আবু তাহের (৪৮)।

মামলার পর খোদ বাদী নাহারু বেগম সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মামলার আসামিদের মধ্যে আব্দুল জলিল, মো. মনির, সরফরাজ, মিরাজ উদ্দিন, মো. মানিক ও মো. তারেককে চিনেন। বাকী আটজনকে চিনেন না। তাঁরা কিভাবে আসামি হলেন সেটাও জানেন না। নাহারু বেগম আরও বলেন, তিনি ভালোভাবে পড়তে জানেন না। ঘটনার পর পেকুয়া চৌমুহনীর একটি দোকানে তাঁর কাছ থেকে তিনটি স্বাক্ষর নিয়েছিলেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। এর বাইরে আর কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।

বাদী নাহারু বেগম বলেন, আমার স্বামী জাকের হোসেনের সঙ্গে টিউবওয়েল শ্রমিকদের বেতনের বকেয়া টাকার দ্বন্ধ নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির বাকবিতন্ডা হয়। এর জের ধরে ১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় পেকুয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হরিনাফাঁড়ি রাস্তার মাথা নামক এলাকায় পৌঁছালে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহত জাকের হোসেনের ভাই জালাল উদ্দিন বলেন, নিরীহ মানুষকে আসামি করার কথা শুনে কাগজটার জন্য থানায় গিয়েছিলাম। সেখানে এক দারোগা আমাকে এক সপ্তাহে পরে আসতে বলে তাড়িয়ে দেন। জালাল উদ্দিন বলেন, নিরীহ আসামি দিয়ে মামলাটিকে হালকা করে দেওয়া হয়েছে। আমরা মরা ভাইকে নিয়ে ব্যবসা করতে চাই না। ওই নিরীহ আটজনকে আমরা চিনিও না। মামলায় কিভাবে তাঁদের নাম এসেছে তাও জানি না।

থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাহারু বেগম মামলাটি করেছেন ২ নভেম্বর হত্যা চেষ্টার ধারায়। ৩ নভেম্বর জাকের হোসেন মারা গেছেন। এখন মামলাটি হত্যা চেষ্টার ধারা থেকে হত্যার ধারায় রূপান্তরিত হবে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, কোনো ঘটনার অভিযোগ থানায় গেলে পুলিশ ঘটনাটি সম্পর্কে তদন্ত করে। এই ঘটনার বিষয়েও পুলিশ তদন্ত করেছে। এরপরও কিভাবে আটজন নিরীহ ব্যক্তি আসামি হয়েছে তা ভাবার বিষয়।

স্থানীয় লোকজন আরও বলেন, দুই বছর আগে বারবাকিয়ার জাফর হত্যা মামলায় মগনামার নিরীহ ছয় ব্যক্তি আসামি হয়েছিলেন। এতে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ সচেতন মহল থেকে প্রতিবাদ হলে পুলিশ তাঁদের মামলা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়।

নিরীহ ব্যক্তিরা আসামি হওয়া প্রসঙ্গে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার দাবী করেন, কয়েকজন ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বাদী এজাহার নিয়ে নিজেই থানায় এসেছিলেন। আর পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে অভিযোগ পেলেই তা গ্রহন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। নিরীহ কেউ আসামি হলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগপত্র থেকে অবশ্যই বাদ দেয়া হবে।