ইয়াবার এক চালান পৌঁছালেই মেলে ১ লাখ টাকা

লোভের ফাঁদে মাদক কারবারে চালক-হেলপার

ইন্দ্রজিৎ সরকার

‘লোভের ফাঁদে’ পড়ে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক-হেলপাররা। যাত্রী বা মালপত্র বহনের আড়ালে তারা পাচার করছেন ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনা বেড়েই চলেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে শুধু রাজধানীতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৬ চালক-হেলপারকে। মাদক বহনে ব্যবহৃত বাস, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক বা প্রাইভেটকারগুলো জব্দ করা হয়েছে।

গত ৪ জুলাই সায়েদাবাদে সেন্টমার্টিন সি-ভিউ পরিবহনের ভলভো বাস থেকে ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় বাসটি জব্দ এবং চালক ও নারী যাত্রীকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি।

ডিএনসির অতিরিক্ত পরিচালক ও ঢাকা বিভাগের প্রধান মজিবুর রহমান পাটওয়ারী জানান, গ্রেপ্তারদের তথ্য অনুযায়ী– প্রতি হাজার ইয়াবা কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পান চালক। একেকটি চালানে সাধারণত ১০ হাজার পিস ইয়াবা পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে এক চালানেই ১ লাখ টাকা পান বাহক। অথচ এই বাড়তি আয়ের জন্য তাদের কোনো শ্রম দিতে হয় না। মাদক কারবারিরা যানবাহনের যাত্রা শুরুর এলাকায় চালানটি বুঝিয়ে দেন। ঢাকায় পৌঁছার পর অথবা আগেই কোনো পয়েন্টে তাদের লোক চালান বুঝে নেন।

ডিএনসি কর্মকর্তারা বলেন, সৌদিয়া ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের মতো জনপ্রিয় বাস সার্ভিসের চালকরাও এ কাজে জড়িয়েছেন। এসব বাসে তল্লাশি চালাতেও আমরা দ্বিধাবোধ করি। কারণ সোর্সের তথ্য ঠিক না হলে হয়রানির অভিযোগ উঠতে পারে। অথচ ‘নিরাপদ মাধ্যম’ ভেবে এসব গণপরিবহনকে কাজে লাগাচ্ছেন মাদক কারবারিরা। এ কারণে এখন নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া প্রতিটি যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে একটি বাসে অনেক যাত্রী থাকেন। একজন সন্দেহভাজনের জন্য তাদের সবাইকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ কারণে গণপরিবহনগুলো সেভাবে তল্লাশি করা হয় না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত থেকে ইয়াবা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া সীমান্ত থেকে গাঁজার চালান আনা হচ্ছে ঢাকায়।

একইভাবে সীমান্তসংলগ্ন বিভিন্ন জেলা দিয়ে আসছে ফেনসিডিল। তবে ফেনসিডিলের চাহিদা কমে আসায় এর চালানও কম ধরা পড়ছে। বাস-প্রাইভেটকার বা অন্য যানবাহনগুলোর বিভিন্ন অংশে লুকিয়ে সহজেই মাদকের চালান আনা যায়– এ কারণে চালক ও হেলপাররা এতে রাজি হন। ধরা পড়ার পর অনেকেই দাবি করেন, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের একপর্যায়ে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হন। কখনও কখনও মাদক কারবারি নিজেও বাসে যাত্রী হিসেবে থাকেন। নির্বিঘ্নে ঢাকায় পৌঁছাতে পারলে চালান নিয়ে নেমে যান। আর পরিস্থিতি বেগতিক বুঝলে কেটে পড়েন।

ডিএনসি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপপরিচালক মাসুদ হোসেন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাঝেমধ্যেই বাস-ট্রাক থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হচ্ছে। গত এক বছরে ডিএনসি দক্ষিণ কার্যালয় এমন আটটি অভিযানে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭৫ হাজার পিস ইয়াবা, ৪৫ কেজি গাঁজা ও ১৫০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়।

ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, এক বছরে ২১ জন চালক-হেলপারকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবসময় যে তারা শুধু বাহক হিসেবে কাজ করেন, তা নয়। কেউ কেউ নিজেই মাদক কারবার চালান। সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা-গাঁজা কিনে বাসে ঢাকায় এনে পাইকারি কারবারিদের কাছে বিক্রি করেন। এতে তাদের লাভের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।