সহিংসতার শঙ্কায় হাজার ইউপিতে ভোট শুরু হয়েছে আজ

ডেস্ক রিপোর্ট  :

গোলযোগ-সংঘাত-সহিংসতার মধে আজ রবিবার তৃতীয় ধাপে এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহন হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ভোটার ও প্রার্থীরা। এ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে এসব নির্বাচনী এলাকায় প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে তৃতীয় ধাপের ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৫৬৯ জন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ১০০ জন, সংরক্ষিত সদস্য ১৩২ জন ও সাধারণ সদস্যা ৩৩৭ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বাদ দিলে ভোটের লড়াইয়ে আছেন ৫০ হাজার ১৪৬ জন প্রার্থী।

এই ধাপের নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাউজানের ১৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য সব কটি পদে একক প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। উল্লেখিত ১৪টি ইউনিয়নে সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য পদ রয়েছে ১২৬টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী সদস্য পদ ৪২টি। এসব পদের সব কটিতে একজন করে প্রার্থী মনোনযনপত্র জমা দেয়ায় ১৪ ইউপির সব পদে সব প্রার্থী ভোটের আগেই নির্বাচিত হয়েছেন । এ ছাড়া রাঙ্গুনয়ায় ছয়টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রতিটি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট না থাকালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলের নেতা-কর্মিরা অংশ নিচ্ছেন।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, এ ধাপের ইউপি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কেরানীগঞ্জের ইউপিগুলোকে ঝুকিপূর্ণ মনে করছে ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউপি, মুন্সিগঞ্জের আধারা ইউপিকে ঝুকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এছাড়া কেরানীগঞ্জ উপজেলার অন্যান্য ইউপি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এ সব নির্বাচনে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বেশি ঝামেলা হচ্ছে। ইসি’র আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ইউপি ভোটকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে এবার। বিগত দুই ধাপের ইউপি ভোটের আগে-পরে ও ভোটের দিন সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৫৪ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। পরিস্থিতি সামলে রাখতে নির্বাচন কমিশন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। পাশাপাশি সব পক্ষের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব নির্বাচনী সহিংসতা রোধ করার জন্য। সহিংসতা ঘটতে পারে এমন ‘পকেটগুলো’ চিহ্নিত করে আগাম গোয়েন্দা তথ্য নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে নজরদারি বাড়ানো ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূক ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইসি। নির্বাচনী পরিবেশ ভালো রাখতে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সমর্থকসহ সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন সিইসি হুদা।

সিইসির দাবি, তার কমিশনের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে ইউপি নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে ভোট ‘প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক’ হয়েছে। সামগ্রিক অর্থে ইউপি নির্বাচন সফল হয়েছে। অল্প বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে; দুর্ঘটনা ঘটেছে, হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো কিছুতেই কাম্য নয়। তবুও নির্বাচনের মানদ- যদি ভোট প্রদান হয়, তাহলে আমি বলব, দুই ধাপের নির্বাচনে গড়ে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।

গতকাল নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে নির্বাচন ভাল হবে। আমরা কোন আশঙ্কা করছি না। ইউপি নির্বাচনে ঘরে ঘরে প্রতিযোগিতা হয়। পাড়ায় পাড়ায় প্রতিযোগিতা হয়। যে কোন সময় যে কোন ঘটনা ঘঠতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা আশা করছি একটা ভোল নির্বাচন হবে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে।

তৃতীয় ধাপে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ১০০৭টি ইউপির। বিভিন্ন কারণে স্থগিত হয়েছে ৭টি ইউপির ভোট। আজ রবিবার ভোট হবে ১০০০ ইউনিয়ন পরিষদে। ভোটার ২,০১,৪৮,২৭৮ জন। ভোটকেন্দ্র ১০,১৫৯টি। ভোটকক্ষ ৬১,৮৩০টি। ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৫৬৯ জন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ১০০ জন, সংরক্ষিত সদস্য ১৩২ জন ও সাধারণ সদস্যা ৩৩৭ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বাদ দিলে ভোটের লড়াইয়ে আছেন ৫০ হাজার ১৪৬ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৪০৯ জন চেয়ারম্যান পদে, ১১ হাজার ১০৫ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে এবং ৩৪ হাজার ৬৩২ জন সাধারণ সদস্য পদে লড়বেন। অষ্টম ধাপের নয়টি পৌরসভাতেও ভোট রয়েছে রবিবার। সবকয়টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় প্রথম ধাপে গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনের ভোট হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দল অংশ নিলেও বিএনপি নিচ্ছে না। ইতিমধ্যে চার ধাপের ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে কমিশন। প্রথম দুই ধাপে প্রায় ১২শ ইউপিতে ভোট শেষ হয়েছে। চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর ৮৪০ ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে। পঞ্চম ধাপে ৭০৭ ইউপিতে ভোট হবে ৫ জানুয়ারি।