সামুদ্রিক মাছের বর্ণিল রাজ্য

রাসেল চৌধুরী ◑
‘সাগর ও মিঠা পানির বর্ণিল রাজত্বে বিচরণ করছে প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুকুর ও সমুদ্রের গভীর তলদেশ, নানা প্রাণীর বসবাসের চিত্র। বিরল প্রজাতির মাছসহ এখানে আছে হাঙ্গর, পিরানহা, শাপলাপাতা, পানপাতা, কাছিম, কাঁকড়া, সামুদ্রিক শৈল, পিতম্বরী, সাগর কুঁচিয়া, বোয়াল, জেলিফিস, চেওয়া, পাঙ্গাস, আউসসহ আরো অনেক মাছ ও জলজপ্রাণী।’ দেখলে মনে হবে আপনি সাগরের তলদেশে আছেন, আর আপনার চারপাশে খেলা করছে বর্ণিল প্রজাতির নানা মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী। মুগ্ধ হওয়ার মতো নান্দনিক সৌন্দর্যের ও চিত্ত বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এটি। বলছিলাম কক্সবাজারে রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের কথা। শহরের অভ্যন্তরে চিত্তবিনোদনের খোরাক হিসেবে কক্সবাজারে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ফিশ অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স এটি। এ যেন পর্যটন শহরের ভেতর আরেকটি ছোট্ট পর্যটন জগৎ। ইতিমধ্যে এই ফিশ অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স পর্যটকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।

এক সময় পর্যটকরা সমুদ্রসৈকত দেখতে এলেও এখন ভ্রমণ তালিকায় যোগ হয়েছে এই অ্যাকুরিয়াম। পর্যটন শিল্প বিকাশে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। ফিশ অ্যাকুরিয়াম রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড পর্যটক দর্শনার্থীদের জন্য দুটি মিনিবাস সার্ভিস চালু করেছে কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় পর্যটক যাত্রীরা বাসে চড়ে অ্যাকুরিয়াম দর্শনের সুবিধা পাবেন। সাগরপাড়ের বিভিন্ন পয়েন্ট ও শহরের কলাতলি এলাকা থেকে পর্যটক দর্শনার্থীদের অ্যাকুরিয়ামটিতে আনা-নেয়ার সুবিধার্থে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী।

তিনি জানান, প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্রসৈকত থেকে কিছু দূরে শহরে মেরিন ফিশ অ্যাকুরিয়ামটি দুই বছর আগে স্থাপন করা হয়। নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারকে মোট ৮টি জোনে গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক সেপস, দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখি, ছবি তোলার আকষর্ণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব, শপিং স্পেস, লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট, এবাদত খানা, শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা, বিয়ে বা পার্টির করার কনফারেন্স হল ও ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি আয়োজন থাকবে বার-বি কিউর। এছাড়া রয়েছে সুপরিসর পার্কিং ও লাগেজ রাখার লকার। এখানেই এসে কোনোরকম বিরক্তি ছাড়াই কীভাবে নিমিষেই ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা কেটে যাবে বোঝাই যাবে না। পুরো সেন্টার নিরাপত্তা বেষ্টনী সিসিটিভির আওতায় থাকবে সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে। এই ফিশ ওয়ার্ল্ডে প্রবেশের জন্য ফি ৩০০ টাকা। এছাড়া বাচ্চাদের জন্যে আছে সুলভ মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা। সময় ও উপলক্ষ অনুযায়ী টিকিট মূল্যের উপর ৫-১০% ডিসকাউন্ট থাকে। তিনি আরো জানান, অ্যাকুরিয়ামটি ইতিমধ্যে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি দর্শনের জন্য সৈকত এলাকা থেকে বাস সার্ভিস দেয়ার কারণে পর্যটকদের বিনোদন আরো সহজ হবে বলে জানান তিনি।

রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের সবকিছু দেখভাল করেন জেনারেল ম্যানেজার ও ইনচার্জ মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম। তিনি জানান, কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে দেখার মতো উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নেই। যেসব পর্যটন স্পট রয়েছে তা শহর থেকে দূরে। তাই পর্যটক ও স্থানীয়দের চিত্ত বিনোদনের জন্য অ্যাকুরিয়ামটি গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিনই অ্যাকুরিয়াম দখতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। এছাড়া অধিকাংশ শিশু-কিশোর সমুদ্র ও মিঠা পানির মাছ সমপর্কে অজ্ঞ। তাই তাদের বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীসহ বিভিন্ন মাছ সমপর্কে ধারণা দেশে এই প্রথম। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্য গৌরবের বলেও জানান তিনি।

অ্যাকুরিয়াম ঘুরে চট্টগ্রাম থেকে ভ্রমণে আসা আবদুল করিম ও শায়লা দম্পতি জানান, নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। সবকিছু এতো পরিপাটি ছিল, যা কখনো ভোলার নয়। বলেন, যেদিকে তাকায়, একটা থেকে একটা ভালো। তবে বেশি ভালো লেগেছে ঝর্ণা। এছাড়া শিশুদের খেলাধুলার জন্য গড়ে তোলা মিনি সেন্টারটিও অসাধারণ বলে জানিয়ে এ দম্পতি।