১০ টাকা কেজির চাল মেরে খাচ্ছেন চেয়ারম্যান, মেম্বার, ডিলার!

অনলাইন ডেস্ক ◑  কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দরিদ্রদের জন্য সরকারের দেওয়া ১০ টাকা কেজির চাল জালিয়াতি মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ডিলাররা মিলে ১০ টাকা কেজির দরিদ্রদের ওই চাল মেরে খাচ্ছেন।

ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া, হাড়িসর্দার গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের অভিযোগ, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে দরিদ্রদের তালিকা করে ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণের কার্ড হলেও গত চার বছরে কোন দরিদ্র পরিবার চাল পাননি। এই দীর্ঘ সময় ধরে ওই চাল মেরে খেয়েছেন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ডিলাররা।

ধনুসাড়া গ্রামের আবদুল মালেক, আবুল হাশেম, মরিয়ম ও রঙ্গু মিয়া অভিযোগ করেন, গত কয়েকদিন আগে ইউনিয়নের ধনুসাড়া ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জালাল উদ্দিন আমাদের ঘরে ঘরে ১০ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয়ের জন্য কার্ড দিয়ে যায়। আমরা প্রথমে ভেবেছি হয়তো নতুন কার্ড হয়েছে। কিন্তু কার্ডের ভিতরে দেখি গ্রহীতার স্বাক্ষরের ঘরে চৌদ্দবার চাল উত্তোলনের টিপসই। কিন্তু আমরা গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে কোন কার্ড পাইনি। কখনও ১০ টাকা দরে চাল উত্তোলন করিনি। আমাদের এই চাল কে খেয়েছে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, স্থানীয় মেম্বার ও ডিলাররা জানেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুলভ মূল্যে কার্ডে চাল বিক্রির জন্য ঘোলপাশা ইউনিয়নে দুইটি ডিলারশিপ রয়েছে। তার মধ্যে ধনুসাড়া গ্রামের পঁচা মিয়ার ছেলে ফরিদ উদ্দিন এবং হাড়ি সর্দার গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে এমরান হোসেনের নামে এই দুইটি ডিলারশিপ। এমরান বিদেশে চলে যাওয়ার পর তার ভাই স্থানীয় মেম্বার বেলাল হোসেন ডিলারশিপটি দেখেন।

২০১৬ সালের মার্চে ইউপি নির্বাচনের পর সেপ্টেম্বরে নতুন করে দরিদ্রদের জন্য সরকারের দেয়া ১০ টাকা মূল্যে চাল ক্রয়ের কার্ড তৈরি হয়। কিন্তু সেই কার্ড দরিদ্রদের কাছে বিতরণ না করে ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জাফরের যোগসাজশে ডিলারদের সাথে সমোঝতা মাধ্যমে কার্ড রেখে দেয়। আর এই ফাঁকে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে দরিদ্রদের জন্য যতবারই চাল গিয়েছে, ততবারই গ্রহীতার স্বাক্ষরের ঘরে টিপসই দিয়ে চাল উত্তোলন করে আসছেন ওই চক্রটি। এরপর গত কয়েকদিন পূর্বে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি হলে মার্চ মাসের শেষ দিয়ে মেম্বাররা ঘরে ঘরে গিয়ে পুরাতন কার্ডগুলো বিতরণ করেন। এরপরই তৈরি হয় দরিদ্র মানুষের অভিযোগ।

এছাড়াও হাড়ি সর্দার এলাকার স্থানীয় মেম্বার বেলাল হোসেন তার ভাই এমরান হোসেন বিদেশে চলে যাওয়ার পর ভাইয়ের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কার্ডধারীদের চাল উত্তোলন করছেন অনায়াসে। এই নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ধনুসাড়া ও হাড়ি সর্দার এলাকাসহ পুরো ইউনিয়নের প্রায় ৬০০ দরিদ্র মানুষের মাঝে। তারা বিভিন্ন দপ্তরে এসব ঘটনায় লিখিত অভিযোগও করেছেন।

অভিযুক্ত ধনুসাড়ার ডিলার ফরিদ উদ্দিন জানান, গ্রাহকের কার্ডগুলো সর্বশেষ মাত্র দুই-তিন মাস ছিল আমার কাছে। এর আগে কার কাছে দরিদ্রদের এই কার্ড ছিল আমি জানি না। খাদ্য অধিদপ্তর থেকে চাল আসলে দরিদ্ররা কার্ড নিয়ে আসলে আমি চাল ১০টা দরে বিক্রি করি। আমি আর কিছু বলতে পারবো না।

হাড়ি সর্দারের স্থানীয় মেম্বার বেলাল হোসেন জানান, আমার ভাই বিদেশে চলে যাওয়ার পর কাগজপত্র আমার বাবা দেলোয়ার হোসেনের নামে করা হয়। আমিই দেখাশোনা করি। কিন্তু গ্রাহকের স্বাক্ষর ঘরে টিপসই দিয়ে এবং স্বাক্ষর জালিয়াতি করে চাল উত্তোলনের অভিযোগ সঠিক নয়। কিছু গ্রাহক আমাদের কাছে কার্ড রেখে যান। চাল আসলে নাম বললে কার্ড দেখে আমি চাল দিয়ে দেই। এছাড়া আমি এইসব অভিযোগের সাথে জড়িত নয়।

ধনুসাড়ার স্থানীয় মেম্বার জালাল উদ্দিন জানান, গত কয়েকদিন পূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ সকল জনপ্রতিনিধিদেরকে ঢেকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে দরিদ্রদের কার্ডগুলো বিরতণের জন্য বুঝিয়ে দেয়। প্রথমে নতুন কার্ড মনে করলেও পরবর্তীতে বিতরণ করতে গিয়ে দেখি ভিতরে চৌদ্দমাসে চাল উত্তোলনের টিপসই। তারপরও আমি বিতরণ করলে গ্রাহকদের অভিযোগ শুরু হয়। এসব বিষয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ডিলাররা জানেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঘোলপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী জাফর জানান, দরিদ্রদের ১০ টাকা দরের চালের বিষয়ের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। কার্ড হলে আমি মেম্বার ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে দরিদ্রদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া কর্তব্য, চাল পৌঁছে দেওয়া নয়। ডিলার সরকারের নিয়োগকৃত সে চাল বিতরণ করবে। কার্ড জালিয়াতি করে গ্রাহকের স্বাক্ষরের ঘরে টিপসই দিয়ে চাল উত্তোলনের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, আমি এই ঘটনায় এখনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।